টেস্ট ক্রিকেট পাঁচদিনের। কিন্তু আহমেদাবাদে গোলাপি বলের দিবারাত্রির ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দল এর দৈর্ঘ্য নামিয়ে এনেছে মাত্র দুই দিনে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম ম্যাচটি ভারত জিতেছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। তাও পুরো দুই দিন খেলা হওয়ার আগেই।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১১২ রানে। জবাবে ভারতের ইনিংস থামে ১৪৫ রানে। খণ্ডকালীন স্পিনার জো রুট মাত্র ৮ রানে নেন ৫ উইকেট। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের আরও বেহাল দশা। এবার তারা থামে ৮১ রানে। ফলে ভারতের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৯ রানের। কোনো উইকেট না হারিয়েই এটি করে ফেলে স্বাগতিকরা।
আহমেদাবাদে হওয়া এই টেস্টের উইকেট নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সেসব আলোচনা যাই হোক না কেন, দুইদিন বা মাত্র ১৪০.২ ওভারেই শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচের রেকর্ডগুলো ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। সেই একগাদা রেকর্ড নিয়েই সাজানো এ প্রতিবেদন:
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ১১২ রানে। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা করতে পেরেছে ৮১ রান। অর্থাৎ দুই ইনিংস মিলিয়ে তারা মোট ১৯৩ রান করেছে। ভারতের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে দুই ইনিংস মিলিয়ে এত কম রানে অলআউট হয়নি আর কোনো দল।
মাত্র ৮৪২ বলে শেষ হয়েছে ম্যাচটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর চেয়ে কম বলে ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘটনা নেই একটিও। ইংল্যান্ড-ভারতের মুখোমুখি হওয়া প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টটি দ্রুত শেষ হওয়া ইতিহাসের সপ্তম টেস্ট, ১৯৩৫ সালের পর থেকে হিসেব করলে এটিই সবচেয়ে কম বলে শেষ হওয়া ম্যাচ।
ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় উইকেট নেয়ার মাধ্যমে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মাত্র ৭৭ টেস্টে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। তার চেয়ে দ্রুত এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন কেবল মুত্তিয়া মুরালিধরন, ৭২ টেস্টে। সবমিলিয়ে ১৬তম বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০ উইকেট নিলেন অশ্বিন।
গোলাপি বলের দিবারাত্রির ম্যাচটিতে দুই দলের মোট রান মাত্র ৩৮৭। এশিয়ার মাটিতে ফল আসা কোনো টেস্ট ম্যাচের এটিই সর্বনিম্ন সম্মিলিত স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ২০০২ সালে শারজাহয় পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে হওয়া ৪২২ রান। টেস্ট ইতিহাসে গত ৭৪ বছরের মধ্যে আহমেদাবাদ টেস্টটিই সবচেয়ে কম রানের ম্যাচ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে মাত্র ৮১ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ এটি। ২০১৫ সালে নাগপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭৯ রানে অলআউট হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে এটিই ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল। আগেরটি ছিল ১০১, ওভালে ১৯৭১ সালে।
ম্যাচটিতে দুই দলেরই দ্বিতীয় ইনিংসে বল করেননি কোনো পেসার। ভারতের হয়ে অশ্বিন, অক্ষর ও সুন্দর এবং ইংল্যান্ডের হয়ে জ্যাক লিচ ও জো রুট বোলিং করেছেন। ফল আসা টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ ইনিংসে কেবল স্পিনাররা বোলিং করার ঘটনা আছে আর একটি। সেটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ঢাকা টেস্টে।
ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে মাত্র ৮ রান খরচ করেছেন রুট। টেস্ট ইতিহাসে কোনো স্পিনারের সবচেয়ে কম রানে ৫ উইকেট নেওয়ার বিশ্ব রেকর্ড এটি। আগের রেকর্ড ছিল যুগ্মভাবে দুই অস্ট্রেলিয়ান টিম মে ও মাইকেল ক্লার্কের। তারা দুজনই ৯ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে ১৪৫ বা এর চেয়ে কম রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটে জেতার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ভারতের এই জয়ের আগে ১৯০৯ সালে বার্মিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১২১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ১০ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে দুই ইনিংস মিলে ৭০ রানে ১১ উইকেট নিয়েছেন অক্ষর। ভারতের হয়ে টেস্টে এর চেয়ে কম রানে ম্যাচে ১০ উইকেট নেই কারও। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে অশ্বিনের ৮৫ রানে ১২ উইকেট ছিল আগের সেরা।
এছাড়া গোলাপি দিবা-রাত্রির টেস্টে ম্যাচ সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এখন অক্ষরের দখলে। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ব্রিসবেনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্যাট কামিন্সের ৬২ রানে ১০ উইকেটের রেকর্ডকে।
এদিকে টানা তিন বা এর বেশি ইনিংসে৫ উইকেট নেয়া চতুর্থ ভারতীয় বোলার হলেন অক্ষর। তার আগে ২০১১ সালে হরভজন সিং, ১৯৮৪ সালে লক্ষন শিভরামাকৃষ্ণান ও ১৯৯৯ সালে জাভাগাল শ্রীনাথ এই কীর্তি গড়েন। সবচেয়ে বেশি টানা ছয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার চার্লি টার্নারের।