আন্দামান সাগর থেকে ভারতীয় কোস্ট গার্ড যে ৮১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে, তাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ বাধ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।
শুক্রবার ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, তারা আন্দামান সাগর থেকে একটি রোহিঙ্গা নৌকা উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারের সময় নৌকায় ৮১ জন জীবিত ছিলেন ও আটজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। নৌকাটি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানান তারা।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভারত অথবা মিয়ানমার গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, তারা (উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা) বাংলাদেশি নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানার ১ হাজার ৭শ কিলোমিটার দূরে তাদের পাওয়া গেছে। আর সে কারণেই, তাদেরকে নেয়ার জন্য আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের সকল রোহিঙ্গা বা নৌকায় ভেসে থাকা লোকজনদের গ্রহণ ও পুনর্বাসন করতে কি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক চুক্তি করানো হয়েছে ও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? না, একেবারেই না।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উচিত উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়া কারণ ওই নৌকার ৪৭ জনের কাছে বাংলাদেশে অবস্থিত ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের পরিচয়পত্র ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি শরনার্থীরা ইউএনএইচসিআরের পরিচয়পত্রধারী হয়, তাহলে কেন তারা (ইউএনএইচসিআর) পাচারকারীদের দ্বারা নিজেদের পরিচয়পত্রধারীদের সাগরে ভাসার অনুমতি দিয়েছে যা তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তাদেরও মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানায় রয়টার্স।
মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌকাটি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায়। নৌকাটিতে ৫৬ জন নারী, আটজন কিশোরী, পাঁচজন কিশোর ও ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছিলেন। সাগরে যাত্রা শুরুর চার দিন পর নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সাহায্যের অনুরোধ পেয়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জাহাজ তাদের উদ্ধার করে।
শরনার্থীদের রক্ষা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিশ্চিতে আয়োজিত ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনে ভারত স্বাক্ষর করেনি। দেশটিতে শরনার্থীদের রক্ষায় নিজস্ব কোনো আইনও নেই। বর্তমানে ভারতে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর। মানব পাচারকারীরা প্রায়শই মালয়েশিয়ায় কাজ দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখায়।