চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকারকে সরিয়ে দিয়ে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সেনাবাহিনী নানাভাবে বিক্ষোভ বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারের সামরিক সরকারের আকস্মিক অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিশেষ দূত কিয়াউ মোয়ে তান সংস্থাটির এক অধিবেশনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাহসী এই দূত জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যে, তার দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সংস্থাটি যেন প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। স্বদেশের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একজন রাষ্ট্রদূতের এমন অবস্থানকে নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকরা।
শুক্রবারও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ঠেকাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। চলতি মাসের ১ তারিখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অভ্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই চাপের মুখে রয়েছে সেনাবাহিনী।
গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনেই মূলত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল।
গত নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয় লাভ করায় নতুন সরকার গঠনের কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যায়।
শুক্রবার সু চির সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে মিয়ানমারে বিশেষ দূত কিয়াউ মোয়ে তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য রেখেছেন। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশের জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান, নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার বন্ধ, জনগণের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার এমন বক্তব্য বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
মিয়ানমারের বিষয়ে একটি বিশেষ বৈঠকের সময় ওই রাষ্ট্রদূত সব সদস্য রাষ্ট্রকে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। সেনাবাহিনী যেন গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয় সে জন্য সামরিক সরকারকে চাপ প্রয়োগের আহ্বানও জানিয়েছেন এই রাষ্ট্রদূত।
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী যে সহিংস আচরণ করছে তা বন্ধে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী সব ধরনের সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন কিয়াউ মোয়ে তান। একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত এবং জনগণের জন্য যে সরকার আমরা এমন একটি সরকারকের জন্যই লড়াই চালিয়ে যাব।’