এডিপির আকার কমছে ৩.৬৬ শতাংশ, চূড়ান্ত হচ্ছে আজ

অর্থনেতিক প্রতিবেদক

এডিপি
ফাইল ছবি

সংশোধনীতে এবারও কমছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ কমছে ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এই প্রস্তাবিত এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার এনইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আরএডিপি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। মোট বরাদ্দের মধ্যে জিওবি বা যা ছিল, তাই আছে। বিদেশি ঋণ-অনুদানের বরাদ্দ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কমছে।’

সূত্র বলছে, সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৫ লাখ প্রাথমিক চাহিদা পায় পরিকল্পনা কমিশন। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছর এডিপির মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি ৭ লাখ এবং বিদেশি ঋণ-অনুদান থেকে আসার কথা ছিল ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপির মোট ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎস প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও বিদেশি ঋণ-অনুদান ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কমিয়ে করা হচ্ছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, মূল এডিপি ও সংশোধিত এডিপিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস বা জনগণের জীবনমাত্রার মানোন্নয়ন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উত্তরণকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এডিপি/আরএডিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি পূরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, নারীর ক্ষমতায়ন, অপরাধ দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, মানবসম্পদ শিক্ষাব্যবস্থা (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বৃত্তিমূলক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মসূচির প্রসার ও উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছর সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতকে মোট বরাদ্দের ৯৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ দেয়া হয়েছে। বাকি ৭টি খাতকে দেয়া হয়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি সেক্টরের মধ্যে পরিবহনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ, যা মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৮ কোটি ২৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

পানিসম্পদ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কৃষি খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বরাদ্দ ৬ হাজার ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শিল্প খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যার হার ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে এডিবির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যার হার ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর কম টাকা বাস্তবায়িত হলেও শতাংশের দিক থেকে বেশি।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

শেয়ার করুন