দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।আজ বুধবার (৩ মার্চ) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে এই নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে তাকে কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আগামী ৫ বছর এই দায়িত্বে থাকবেন।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. জহরুল হককে দুদকের কমিশনার করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুদক চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। আর কমিশনার মো. জহুরুল হকের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হবে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ।
বর্তমানে কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ আগামী ১৩ মার্চ শেষ হচ্ছে। একইসঙ্গে কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলামের মেয়াদও শেষ হচ্ছে।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও একজন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে কমিটির সভাপতি করা হয়। এছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন— সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী, কমিশন তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজন হন চেয়ারম্যান। কমিশনারদের মেয়াদ পাঁচ বছর।
১৯৫৯ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করা আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮৩ সালে জনপ্রশাসনে যোগ দেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকার সময় ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট অবসরে যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। এর আগে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক এবং ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৯ সালের ১ জুলাই সরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পিকেএসএফ) নিয়োগ পান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিন বছরের জন্য তিনি এই নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি কর্মজীবনে সব জায়গায় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
- আরও পড়ুন >> ৩ মার্চ ১৯৭১: স্বাধীনতার পথে বিশাল মাইলফলক
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপি সরকার বিদেশি দাতা সংস্থার চাপে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করে। বিচারপতি সুলতান হোসেন খানকে দুদকের প্রথম চেয়ারম্যান করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা ও আর্থিক ডিভিশনের মনিরউদ্দিন আহমেদকে কমিশনার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুদককে তারা কার্যকর করতে পারেননি। নিজেদের মধ্যে দূরত্বের কারণে দুদকের বিধিমালাও তারা করতে পারেননি। ফলে বিতর্কিত দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করা হলেও তিনজনের অনৈক্যে দুদক তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তনের পর সেনাশাসিত সরকার দুদককে সক্রিয় করে। সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ উদ্দিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এনবিআরের কমিশনার মনজুর মান্নান ও সাবেক জেলা জজ হাবিবুর রহমানকে কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২০১০ সালের এপ্রিলে দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করেন। এরপর সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। তার মেয়াদ শেষে দুদকের কমিশনার এম বদিউজ্জামানকে কিছুদিনের জন্য দুদকের চেয়ারম্যান করা হয়। তার মেয়াদ শেষ হলে সাবেক সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদকে ২০১৬ সালের মার্চে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।