স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছে না শিক্ষাগত যোগ্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন
ফাইল ছবি

ক’দিন পরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও মেম্বার পদে এসএসসি নির্ধারণের কথা ওঠে। ফেসবুকে নানা সময়ে এ বিষয়টি ভাইরালও হয়েছে। এ নিয়ে কেউ হতাশ আবার কেউ খুশিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রকৃত তথ্য জানার আগ্রহ সবারই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে দলগতভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগেরও এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, এটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই আছে। পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

universel cardiac hospital

তারা বলছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে ‘বৈষম্যে’র অভিযোগ তোলার সুযোগ আছে। আবার স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সে হিসেবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরও বেশি স্মার্ট, ইফিশিয়েন্ট ও দায়িত্বশীল করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়। এ দুটো দিকই পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি বা এসএসসি করার কোনো উদ্যোগে নেই আমাদের। এ বিষয়ে ফেসবুকে যে খবরটি আসছে, সেটি গুজব।’

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এ বিষয়টি এখনো আমাদের দলীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়নি। সাধারণত নির্বাচনী পদগুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতা রাখা হয় না। উপমহাদেশে আমি এটি দেখিনি। দু-একটি ব্যতিক্রম হয়তো থাকতে পারে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করলে সেটি আইনত সিদ্ধ হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনবিদ ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এটির পক্ষে-বিপক্ষে যৌক্তিক মতামত দেয়ার সুযোগ আছে। প্রথমত, সংবিধানের আলোকে বা আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সে দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করলে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুযোগ নেই। কারণ একটা যুক্তি আসতে পারে যে, যোগ্যতা দিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, আরেকটি যুক্তি আসতে পারে, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, স্মার্ট ও ইফিশিয়েন্ট করতে যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের অধীন। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কাউন্সিলর- এ পদগুলো নির্বাচনী পদ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে যান। যখন পদে বসেন, তখন তিনি স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা। তার ভাতা আছে, তাকে চাইলে স্থানীয় সরকার অব্যাহতিও দিতে পারে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে জনবল নেয়া হয়, সেগুলোতে তারা চাইলে যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি আসতে পারে।

এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আইনে পরিণত করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের আইনের ভিত্তিতে শুধু নির্বাচন আয়োজন করে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করার সুযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনার হিসেবে আমার মতামত দেয়ারও সুযোগ নেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায় এটির পক্ষে-বিপক্ষে মত আসছে। তবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে শিক্ষিত নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন