সুইজারল্যান্ডে মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সুইজারল্যান্ডে মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ
ছবি : ইন্টারনেট

সুইজারল্যান্ডে গণভোটে মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধের প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুসলিম নারীদের বোরকা ও নেকাব। ডানপন্থী সুইস পিপলস পার্টি (এসভিপি) গণভোটের বিষয়টি সামনে আনলে রোববার (৭ মার্চ) ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। খবর: বিবিসি।

এই প্রস্তাবের ফলে কোনো ব্যক্তি জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখতে পারবেন না। রেস্তোঁরা, স্টেডিয়াম, গণপরিবহণ এমনকি রাস্তায় হাঁটার ক্ষেত্রেও মুখ ঢাকা পোশাক পরা যাবে না। তবে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কারণে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ করোনা থেকে রক্ষায় মাস্ক পরতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ধর্মীয় উপাসনালয়ে এই নিয়মের ছাড় দেয়া হবে।

গণভোটে মুসলিমদের পোশাককে সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিষদভাবে এটিকে ‘বোরকা নিষেধ’এর ইঙ্গিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দেশটির শীর্ষ ইসলামী গোষ্ঠী সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব মুসলিম এটিকে মুসলিমদের জন্য ‘একটি কালো দিন হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, আজকের এই সিদ্ধান্ত পুরনো ক্ষতকে উন্মুক্ত করলো, আইনি বৈষম্যের নীতিকে আরও প্রসারিত করলো এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের বর্জনের একটি স্পষ্ট বার্তা। এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তারা আদালতে যাবে বলেও জানানো হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে, নারীরা যা পরেন তা সরকারের ওপর নির্ভর কর না।

সুইজারল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো বিষয়ে এক লাখ মানুষ স্বাক্ষর প্রদান করলে সেই প্রস্তাবের উপর জাতীয় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে ৫১ দশমিক দুই শতাংশ মানুষ প্রস্তাবটির পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে দেশটির ২৬টি ক্যান্টনের (প্রশাসনিক অঞ্চল) ছয়টিতে বেশিরভাগ মানুষ এই প্রস্তাব সমর্থন করেননি। এই ছয় ক্যান্টনের মধ্যে রয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় তিন শহর জুরিখ, জেনেভা ও বাসেল। এছাড়া রাজধানী বার্নের অধিকাংশ মানুষও ছিলেন বিপক্ষে।

এর আগে গণভোট কমিটির চেয়ারম্যান এবং এসভিপি দলের আইনজীবী ওয়াল্টার ওবম্যান মুখ ঢেকে রাখাকে ‘চরমপন্থা ও রাজনৈতিক ইসলামের প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন।’ ইউরোপে যা দিন দিন বাড়ছে এবং সুইজারল্যান্ডে এর কোনো স্থান নেই বলে জানিছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডে আমাদের ঐতিহ্য হলো আপনার মুখ দেখান। এটি হলো আমাদের স্বাধীনতার মৌলিক ভিত্তি।’

সুইজারল্যান্ড মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য সানজিদা আমেতি বলেন, ‘এই আয়োজন এবং পোস্টারে মুসলিম নারীর চিত্রায়ণ দুঃখজনক। এই ভোটের ফলে সুইজারল্যান্ডের অনেক মুসলিম নারী অপমানিত বোধ করবে এবং নিজেদেরকে সমাজের অংশ মনে করবে না। তাদের একটি কোনায় ঠেলে দেয়া হলো, যেখানে তাদের স্থান নয়। আমরা এই নারীদের এভাবে দেখতে চাই না।’ তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছেন।

ইউরোপের অনেক দেশেই মুসলিমদের পর্দা করা বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সে ২০১১ সালে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া এবং বুলগেরিয়ায় প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিক মুখ ঢাকা নিষেধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন