স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বলতে পারি না আমরা স্বাধীন: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তখনই নারীর অধিকার পুরোপুরি সংরক্ষণ করা যাবে, যখন দেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র থাকবে। আজকে দুর্ভাগ্য এই জাতির, পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা একথা বলতে পারি না যে, আমরা স্বাধীন। মা-বোনেরা তারা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। তারাও বলতে পারে না যে, তারা স্বাধীন। এই সরকার সকলের স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে। বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে, মৌলিক স্বাধীনতা-গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক র‌্যালীপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই র‌্যালি করে। র‌্যালিটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কাকরাইল মোড় হয়ে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। এতে নেতা-কর্মীরা ‘নারী নির্যাতন বন্ধ কর’, ‘বিনা বেতনে পড়ালেখার সুযোগসহ নারীদের জন্য খালেদা জিয়ার উদ্যোগ’ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেন। এদিকে কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিএনপির কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নারীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোতে আসতে হবে। নারীদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে। পুরুষ-নারী সবাই মিলে চেষ্টা করলে ‘দেশকে মুক্ত করা, নারীদের মুক্ত করার’ সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব।

বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে নারীর উন্নয়নের জন্য, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার জন্য তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সেই আলো জ্বালিয়েছিলেন নারীদের মধ্যে, যাতে করে তারা বেরিয়ে আসেন। তাদের অধিকার আদায় করে নিতে পারেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এরপর যে নারী নেত্রীকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা জানাতে চাই তিনি হলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি এই দেশে মহিলাদের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় কাজটি করেছিলেন, মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার জন্য বিনা বেতনে তিনি গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম দেশে নারী অধিদপ্তর এবং মহিলা মন্ত্রণালয় তৈরি করেছিলেন। যেটি এর আগে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে করা হয়নি। বাংলাদেশে নারীদের কল্যাণের জন্য যা কিছু করা হয়েছে তা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব থেকে করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, আজ শুধু নারীরা নয়, বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ তারা নির্যাতিত। তারা বন্দি, তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমার কাছে বিস্ময়কর হয়ে উঠেছে সংবাদপত্রের পাতায় খবরটি এসেছে মাননীয় প্রধান বিচারপতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলার শুনানিতে বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়’। আবার বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশেও ব্যঙ্গচিত্র হয়, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যঙ্গচিত্র অন্যরকম। এতে দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়’। কিন্তু আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, কোনো নাগরিকের কথা বলা, মুক্তকণ্ঠে আওয়াজ তোলা, চিত্রাঙ্কনে ব্যঙ্গচিত্র তুলে ধরলে যদি তাকে সরকারি হেফাজতে খুন করা হয় তাহলে তাতে কি দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়? এটাতো জনগণ জানতে চাইতেই পারে। আপনি প্রধান বিচারপতি, আপনি যে অভিমতগুলো দিয়েছেন এটা অবশ্যই শিরোধার্য। কিন্তু এই যে বলেছেন, ব্যঙ্গচিত্র করলে দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়, তাহলে কার্টুন আঁকার জন্য সরকারি হেফাজতে, পুলিশ হেফাজতে যদি তাদের হত্যা করা হয় তাতে কি দেশের ইমেজ বাড়ে?

নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তনু, মিতু, রাফিদের মতো অগণিত নারীর আর্তনাদ ভেসে আসছে। খবরের কাগজের পাতা খুলে শুধু নারী নির্যাতনের খবর ছাড়া কিছুই দেখবেন না। জাতি হিসেবে আজ আরও সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। কোথাও কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনার-আমার সন্তানেরও নিরাপত্তা নেই। সন্তানের নিরাপত্তার জন্য এ সরকারের পতন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় র‌্যালীপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মহিলা দলের সাবেক সভাপতি নুরে আরা সাফা, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলোফার চৌধুরী মনি, জাহান পান্না প্রমুখ।

শেয়ার করুন