জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারিনি, দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইকবাল মাহমুদ
ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমরা ‘জন-আকাঙ্ক্ষা’ পূরণ করেত পারিনি। জনগণ যতটুকু চায়, ততটুকু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

সোমবার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিদায়ী অনুষ্ঠান ও ‘গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় তিনি এসব বথা বলেন।

তিনি বলেন, জন-আকাঙ্ক্ষা পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেই পূরণ করা সম্ভব হয় না। এটা পূরণ করতে পারলে তো কমিশনের প্রয়োজন ছিল না।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমি, আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে। তবে আমি তৃপ্ত হতে পারিনি। জনগণের আস্থার প্রতিদান সেভাবে দিতে পারিনি। সবক্ষেত্রে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তবে আমরা সবাইকে একটি বার্তা দিতে পেরেছি যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অনেক ক্ষমতাধর মানুষকে দুদকের বারান্দায় আসতে হয়েছে। কেউ অন্যায় করে রেহাই পায়নি। এই বার্তাটি আমরা পৌছাতে পেরেছি।

কোনো চাপে কখনো কোনো দায়িত্ব পালন করতে সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সরকারে উপর মহল থেকে কখনো কোনো চাপ পাইনি। তবে যে কাজ বা সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে সেসব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। সেখানে নিজেই নিজের বিবেকের কাছে চাপে পড়েছি।

কাজ করতে গিয়ে দুদকরে সবেচেয়ে দুর্বলতা কোন জায়াগায় আপনার কাছে মনে হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ইকবাল মাহমুদ বলেন, এখানে কোয়ালিটি সম্পন্ন লোকবলের অভাব। কমিশনের যে ধরনের লোক দরকার তেমন লোক নাই। যারা আছে তাদেরকে আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে হবে।

দুদকের কর্মকর্তাদের ঘুষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মানুষ নিয়ে কাজ করি। মানুষকে ডিল করা খুব সহজ কাজ নয়। আর মানুষ লোভ লালসার উর্ধ্বেও নয়। তবে যারা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারো কারো পদের অবনমন হয়েছে। তবে একটা কথা বলে রাখি, দুদক সব কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। এটাও জনগণকে বুঝতে হবে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, তিনজন মানুষ নিয়ে কমিশন গঠিত। এর বাইরে আমার একটা একান্ত ব্যক্তিগত মতামত আছে, সেটা হলো অন্তত সাতজনের একটি কমিশন হতে পারে। যেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে যুক্ত করা যেতে পারে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন ইকবাল মাহমুদ। ২০১২ সালে সরকার ‘সিনিয়র সচিব’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করলে আরও সাতজনের সঙ্গে ইকবাল মাহমুদও ওই পদ পান। সে সময় তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব। ওই বছর নভেম্বরে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পান।

ইকবাল মাহমুদ ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান হিসাবে তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি দুদকের চতুর্থ চেয়ারম্যান হিসাবে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) তার মেয়াদ শেষ করবেন।

মেয়াদ শেষ হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমি অন্যদের মতো বলবে না দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি বলবো, এক বসন্তে হাসি মুখে এসেছিলাম, আরেক বসন্তে হাসিমুখে চলে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন