বিলিয়ার আলোচনায় বক্তারা : রাজনৈতিক ঐক্যের অভাবে সম্ভাবনা পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিলিয়ার আলোচনায় বক্তারা
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্যমতের অভাবে বৈশ্বিক অঙ্গণে সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের ৫০ (১৯৭১-২০২১): বিশ্ব রাজনীতিতে অবদান’ শীর্ষক বক্তব্য রাখার সময় ওই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিলিয়া আয়োজিত ধারাবাহিক বক্তৃতার অংশ হিসেবে গতকাল ওই বক্তৃতা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিলিয়ার পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের চেয়ে ২৫ বছর এগিয়ে ছিল। শিশু অধিকার রক্ষায় ১৯৭৪ সালে একটি আইন করা হয়েছিল। সেখানেও বাংলাদেশ বিশ্বের চেয়ে ১৫ বছর এগিয়েছিল।

তিনি বলেন, ইরান ও ইরাকের মধ্যে গিনির নেতৃত্বে উদ্যোগে সদস্য হিসেবে ছিল বাংলাদেশ। ওই উদ্যোগে কোনো ফল না এলেও বিশ্ব জেনেছে যে বাংলাদেশ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।

মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এ দেশে রাজনৈতিক ঐক্যমতের অভাবে বৈশ্বিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ অনেক অর্থনৈতিক অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অবস্থা নাজুক। শিক্ষার মানও কমেছে।

নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হলেও পরে তা বিলোপ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনরা সব সময় ‘ভূমিধ্বস জয়’ পায়। পাকিস্তান, নেপাল ও লিবিয়াও নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে সৃষ্ট কাঠামোর অধীনে নির্বাচন করে সফল হয়েছে।

বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেই। সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান এই সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ কোনো আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক শক্তি হয়ে ওঠতে পারেনি।

আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভূরাজনীতির মধ্যে পড়ে গেছে। পররাষ্ট্র নীতির সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ঐক্যমত ছাড়া পররাষ্ট্রনীতিতে খুব সফল হওয়া যায় না। গত ৫০ বছরে আমাদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলো বোঝার সৃষ্টি করেছে। আমরা একা চলতে পারব না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বয়স কম হতে পারে কিন্তু এর সংস্কৃতি অনেক পুরনো। অনেক ইউরোপীয় দেশের চেয়ে। এমনকি আমেরিকার চেয়েও।

মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে পশ্চিমাদের ছবক দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ঢুকলে বোঝা যাবে চোর কে? সেখানে সব চুরির মাল। উপনিবেশ স্থাপন করে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে ব্রিটিশরা।’

কূটনীতিতে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বদলানোর ওপর জোর দিয়ে ড. ইমতিয়াজ বলেন, পশ্চিমাদের কেউ যদি আমাকে মানবাধিকার শেখায় আমি বলবো, মশকরা করবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, ইউরোপের যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি হিসাবে প্রতি বছর এক হাজারের বেশি লোক বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়। সেখানে প্রতিদিন শিশুরা গুলিবিদ্ধ হয়। ক্যাপিটল হিলে পাঁচ জন মারা যাওয়ার পরও বলা হয়, গণতন্ত্র টিকে থাকল।

আইনজীবী ব্যরিস্টার তানিয়া আমির বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ দৃশ্যত এনজিওর মাধ্যমে মোকাবিলা করছে। কোনো এনজিও রাজনৈতিক সমাধান দিতে পারবে না। বিলিয়া চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন