দৈনিক শনাক্তের হিসেবে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরের জুন থেকে দৈনিক শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা কমতির দিকে থাকলেও প্রায় দুই মাস পর গতকাল এক দিনে এ সংখ্যা নয়শ ছাড়িয়েছে।
গত কয়েক মাসের তুলনায় হাসপাতালে করোনার রোগীও বেড়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক না হলেও মানুষের মধ্যে উদাসীনতা সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়াবে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে তিনটি বড় কারণ চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ চলাফেরা; টিকা আসায় ‘কোনো ভয় নেই’ মনোভাব এবং সংক্রমক ভাইরাসটি প্রতিরোধে আবশ্যকীয় মাস্ক পরিধানে অনীহা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়া মহামারী সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণাতেও ঘাটতি দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গরমের সময়ে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজনীতা রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
এ অবস্থায় মহামারী প্রতিরোধে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি মাস্ক পরা, সতর্কতা মেনে চলা ও জনসমাগম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলায় খেদোক্তি ঝরেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কণ্ঠেও। মহামারীর মধ্যেও মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিনোদন কেন্দ্রসহ নানা পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতো স্বাস্থ্যমন্ত্রীও সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানার কথা বলেছেন।
গতকাল রাজধানীতে যক্ষ্মা নিয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যেভাবে কক্সবাজার যাচ্ছে, সিলেটে যাচ্ছে, যেভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, মাস্ক পরার বালাই নাই, সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই- সংক্রমণ তো বাড়বেই। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে আগের তুলনায়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শীত-গরমের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সম্পর্ক নেই। যখনই মাস্ক না পরে, স্বাস্থবিধি না মেনে মানুষ অবাধে ঘুরে বেড়াবে তখনই সংক্রমণ বাড়বে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা হলে তখন সংক্রমণও কমে আসবে।’
ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘এখন বাড়তে শুরু করেছে কারণ টিকা আসার পর অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পুরো অনীহা চলে আসছে। এটা ঠিক নয়। বরং ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে হবে। সংক্রমণের হার নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন না হলেও মানুষের মধ্যে উদাসীনতা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতে পারে।’
গত বছরের ৮মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ হাজার ৪৮৯ জন। গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে রয়েছে।
এদিকে করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গরমকালে করোনার সংক্রমণের নিচু ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন।
তিনি বলেছেন, সবসময় আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসটি একটি রহস্যময় আচরণ করেছে। এখন সংক্রমণ বাড়ছে। বড় মাত্রার না হলেও সংক্রমণের অল্প ঢেউ সামনে আমাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে। সেই বিষয়ে প্রস্তুতি রাখতে হবে। করোনার সংক্রমণের প্রকৃত চিত্রটি বুঝতে গবেষণা জরুরি। এর জন্য বাজেট দরকার।