রাজধানীর বাজারে দেশি-বিদেশি মুরগির দাম বেড়েছে। কারণ, নগরীতে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আগের চেয়ে বেড়েছে। আর এই উৎসবই যেন অনেকের মুরগি কেনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেল এমন দৃশ্য।
বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ল মুরগির দোকানগুলোতে ক্রেতার আগমন বেশি অন্য দিনের তুলনায়। অনেকক্ষণ ধরে দরদাম করেও মুরগি না কিনে দোকান থেকে বের হলেন একটি প্রাইভেটকারের চালক মোহাম্মদ হাবিব। কথা হলো তার সঙ্গে।
পরিবারে পুষ্টিকর খাবারের জোগান নিশ্চিতে তিনি বাজারে এসেছেন মুরগি কিনতে। প্রতি পিস ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের এক হালি মুরগি পছন্দ করেছিলেন তিনি। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছেন এক হাজার ৬০০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় এ দোকান থেকে ফিরছেন খালি হাতে।
বিক্রেতারাও জানালেন, চাহিদা বেড়েছে তাই দামের এই ঊর্ধ্বগতি। প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি ওজনের প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকার মধ্যে। দেশির মুরগির প্রতি পিসের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা, বড় আকারের একেকটি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায় আর মাঝারি আকারের দাম পড়ছে ৪০০ টাকা। এ সপ্তাহে অবশ্য ব্রয়লার মুরগির দামের কোনো হেরফের হয়নি। অনুষ্ঠানাদি বেড়েছে, চাহিদার তুলনায় মুরগির সরবরাহ কম বলেও জানান তারা।
খাসির মাংসের দোকানে দেখা গেল বেশ ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। আগেই অর্ডার দেয়া মাংস নিতে অপেক্ষায় রয়েছেন নাহিয়ান নামে এক যুবক। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গত মঙ্গলবার সাড়ে ৮০০ টাকা কেজি দরে ১৩০ কেজি মাংসের অর্ডার দিয়েছিলেন তিনি। তার হিসাবে তিনি বেশ জিতেছেন। কারণ, বাজার দর ৯০০ টাকা কেজি।
তবে, বিক্রেতারা জানালেন- এক সঙ্গে অনেক অর্ডার তাই সব বিবেচনায় বাজার দরের কমেই সরবরাহ করছেন তারা। কিছুটা ওঠানামার মধ্যে রয়েছে মাংসের বাজার দর। তবে, মাস দেড়েক ধরে ৯০০ টাকার মধ্যেই বেচাকেনা চলছে। গরুর মাংস আগের দামেই (৫৮০ টাকা/কেজি) বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে সরগরম মাছ বাজারে এসে জানা গেল দাম বাড়েনি; কমেওনি। বিক্রেতারা এমন দাবি করে জানালেন প্রতি কেজি পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়, মাঝারি আকারের এককেজি বোয়ালের দাম পড়ছে ৬০০, আইড়ের কেজি পড়ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। মাঝারি আকারের রুই-কাতলের দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। টেংরার কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে, বিক্রেতাদের অভিজ্ঞতা এক সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে প্রায় মাছেরই।
কাঁচাবাজারে এসে জানা গেল প্রায় সব সবজির দামই বাড়তি। বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা, শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ আবার গ্রীষ্মকালীন সবজি সবে বাজারে আসতে শুরু করেছে। যেমন বাজারে নতুন আসা এক কেজি শজনের দাম পড়ছে ২০০ টাকা। প্রতি কেজি করলা, পোটল, বেগুন আর কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ৩০ টাকার মধ্যে মিলছে গাজর, পেঁপেঁ, মিষ্টি কুমড়ার ফালি। প্রতি পিস চাল কুমড়াও মিলছে প্রায় এই দামেই। সিমের দাম পড়ছে ৫০ টাকা।
ক্রেতাদের জন্য বিক্রেতাদের পূর্বাভাস হলো, নতুন সবজি বাজারে ভরপুর হতে সময় লাগবে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ; এরপরই কমতে শুরু করবে দাম।