ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা ‘ড্রিংকেবল’ হলেও তার গুণাগুণ শর্তসাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। আর এ জন্য ওয়াসার পানি ১০ মিনিট ফুটিয়ে খেতে তিনি রাজধানীবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন।
পুরান ঢাকার ইসলামবাগে ওয়াসা কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে গ্রাহকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি একথা বলেন।
তাকসিম এ খান বলেন, আমরা যে পানিটা দিচ্ছি, সেটা ড্রিংকেবল ওয়াটার (পানযোগ্য পানি), ড্রিংকিং ওয়াটার (পানীয়) না। ড্রিংকিং পানি হচ্ছে মিনারেল পানি। ড্রিংকেবল ওয়াটার হচ্ছে, এটা আপনি খেতে পারবেন, তবে একটু শর্ত সাপেক্ষে। সেটা হচ্ছে আপনি পানিটাকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে খান।
ওয়াসা এমডি জানান, সরবরাহ করা পানির ১০ শতাংশে পাইপলাইন থেকে ময়লা ঢুকতে পারে। তবে ওয়াসার চলমান ডিএমএ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রাহকের বাসা পর্যন্ত শতভাগ পানযোগ্য পানি পৌঁছাবে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তবে সে পানিকে পানযোগ্য রাখতে ছয় মাস অন্তর অন্তর রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে।
পানির বিল পরিশোধ পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে জানিয়ে ওয়াসার এমডি বলেন, এটা একটা আমূল পরিবির্তন। আমরা এক্সট্রিমলি অটোমেশনে যাচ্ছি। এটা নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করেছিলেন। আজ এটা বাস্তবতা৷
আইন অনুযায়ী ৫ শতাংশ পানির বিল বকেয়া থাকতে পারে। কিন্তু ওয়াসার মাত্র দুই শতাংশ বকেয়া আছে জানিয়ে এমডি বলেন, আমরা যখন যাত্রা শুধু করেছিলাম। তখন প্রতি একশো টাকায় ৬৪ টাকা আদায় ছিল। ৩৪ টাকা পানিতে যাইত। এখন আদায় ৯৮ শতাংশ। আইনে আছে ৫ শতাংশ বকেয়া থাকতে পারবে। আমরা তো বকেয়াও আদায় করে ফেলছি। বকেয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত না। তবে গ্রাহকদের অনুরোধ করব, আপনারা সময় মত বিল দিয়েন।
এমডি আরও বলেন, চাহিদার চাইতে বেশি পানি সরবরাহ করার মত সক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দিয়ে দিছেন। ঢাকায় প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪৫ কোটি লিটার। আমাদের উৎপাদন ২৬৫ থেকে ২৭৫ কোটি লিটার৷ যা চাহিদার চাইতে বেশি।
অতিরিক্ত পানি সরবরাহ ক্ষমতা থাকলেও পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার একাংশের বাসিন্দারা পানির অভাবে ভুগছেন। এ বিষয়ে ওয়াসার এমডি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পানি আছে। কিন্তু শেখেরটেকে পানি নাই। এটা টেকনিক্যাল সমস্যা। এটা সমাধানের জন্যই আমরা আছি।
ডিএমএ স্থাপনা হলে পানি পরিচ্ছন্ন থাকবে এবং টানা মোটর ব্যবহার করতে হবে না বলে জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, আমরা পদ্মা নদী থেকে পানি আনতেছি। আমাদের পানির সোর্সে ১০০ শতাংশ পানি সঠিক। বিপত্তিটা রাস্তায়। আমরা নতুন পাইপলাইন বসাচ্ছি। এ এলাকায় পাইপলাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। এটা শেষ হলে কোনো ফুটাফাটি থাকবে না। পানির কোয়ালিটির কোনো সমস্যা হবে না। টানা মোটর লাগবে না। আমরা ওই দিকেই যাচ্ছি। ডিজিটাল ওয়াসা।
তিনি আরও বলেন, মাস্তানদের নিয়ন্ত্রণে ঢাকার বস্তিতে অনেক অবৈধ সংযোগ ছিল। তখন ওয়াসার সেই পানির বিল পেত না। অথচ বস্তিবাসী প্রতি পরিবার মাসে পানির বিল গুনতেন ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, ওয়াসা বৈধ সংযোগ দেয়ার পর বস্তিবাসীর বিল আসছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকা সংস্থাগুলোর জন্য রোল মডেল উল্লেখ করে তাকসিম এ খান বলেন, আমাদের সিস্টেম লস মাত্র পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ায় নাই। তাই আমাদের রোড মডেল ধরা হয়।
তাকসিম এ খান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওয়াসা ‘জিরো টলারেন্স’। অনেক সময় গ্রাহক ওয়াসার কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজসে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এ ধরনের কর্মচারী ও গ্রহকদের সতর্ক করেন তিনি।
এদিকে অনুষ্ঠানে গ্রাহকরা ওয়াসাকে তাদের সেবার জন্য ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি বিল তিন মাসের বেশি বকেয়া থাকলে গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্নের দাবি জানিয়েছেন খোদ গ্রাহকরা। এছাড়াও রমজান মাসের আগে বকেয়া বিল ও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের দাবি জানান তারা। তবে, রমজানে এ ধরনের অভিযান না করার দাবি তাদের।
চানখারপুল এলাকার পানিতে গন্ধের অভিযোগ করেছেন এক গ্রাহক। পানির বিল কমানো ও বকেয়া বিল সহজ কিস্তির মাধ্যমে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কয়েকজন গ্রাহক।
অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। যেখানে বলা হয়, ওয়াসা যখন ঢাকার পানির দায়িত্ব পায়, তখন ঢাকায় ছিল পানির জন্য হাহাকার। বর্তমানে ঢাকাতে পানির কোনো ঘাটতি নেই। পাশাপাশি ওয়াসার বিল পরিশোধ ও অন্যান্য সেবা গ্রাহকদের জন্য সহজীকরণ করছে ঢাকা ওয়াসা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়সহ ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন।