প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর এক ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। শুরুতে অভিযানের পরিমাণ কম হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এর পরিধি। যদিও চাহিদা অনুযায়ী এখনও জনবল নেই অধিদফতরের।
জেলা পর্যায়ে মাত্র একজন করে সহকারী পরিচালক নিয়ে চলে অভিযান। তবুও সপ্তাহের প্রায় সব দিনই চলে অভিযান। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনও বাদ পড়ছে না বাজার তদারকি থেকে।
অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, শুরুতে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে মাত্র সাতটি বাজারে অভিযান চালানো হয়। সে সময় ৫৪টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। স্ব-উদ্যোগে অধিদফতর বাজার মনিটরিং করলেও তখন কোনো ব্যক্তি থেকে অভিযোগ আসেনি।
২০২০-২১ অর্থবছর এখনও শেষ না হলেও চলতি অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৫১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। যার মধ্যে ১৬ হাজার ৯৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ১০ কোটি ২৩ লাখ এক হাজার ৭০০ টাকা আদায় করে অধিদফতর। এসময় শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে ৬ হাজার ৮২৭টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির সংখ্যা ৬ হাজার ৮০০টি।
কেউ যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, সেটি সঙ্গে সঙ্গে আমলে নেয় অধিদফতর। ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যে জরিমানা অধিদফতর করে তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে দেয়া হয়। দ্রুত সময়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়ায় অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের মাঝে।
অধিদফতর সূত্র জানায়, গত এক দশকে, অর্থাৎ ২০০৯-১০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪১ হাজার ১০৭টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় ৯৭ হাজার ৩০৯টি জরিমানা করে ৭২ কোটি ৮৪ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা আদায় করা হয়।
এর মধ্যে ২৫ শতাংশ হারে জরিমানার অর্থ অভিযোগকারীকে দেয়া হয়। বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। অর্থাৎ অভিযোগকারীকে দেয়া হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ২৫২ টাকা, সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে ৭১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ১২৩ টাকা।
আলোচিত সময়ে মোট ৩৯ হাজার ৮০১টি অভিযোগ আসে অধিদফতরে। অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৭ হাজার ৯০৯টি। অনিষ্পত্তি বা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৮৯২টি। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৪৫টি, ২৫ শতাংশ হিসাবে জরিমানার অর্থ পেয়েছে ৬ হাজার ৬৪৫ জন।
অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায়কৃত জরিমানা হলো ৪ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৮ টাকা। অভিযোগকারীকে জরিমানা থেকে দেয়া হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ২৫২ টাকা।
এ বিষয়ে অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, মহামারিতেও বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব ও ডিজি স্যারের নির্দেশনায় অধিদফতরের কর্মকর্তারা আস্থার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোক্তা আইন বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। জরিমানা করাটাই মুখ্য বিষয় না, আমরা চাই ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা। আমাদের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগ নিয়েও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মহামারির মধ্যেও আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছি। এ সফলতা অধিদফতরের, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
এ প্রসঙ্গে অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাবলু কুমার সাহা বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার আওতায় আনছি। নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনাকারী সকল ব্যবসায়ীকে এ অধিদফতরে সব সময় সাধুবাদ জানাই।
ভোক্তা ও ব্যবসা বান্ধব একটি সুশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি। এছাড়াও মাস্ক পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ জানান।