বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে করোনা মহামারি উপেক্ষা করে পাঁচ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের আসন্ন ঢাকা সফরকে ‘অসাধারণ’ ও ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
আজ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক সময় (কোভিডের কারণে)। তবু প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা আমাদের জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আসছেন।
মোমেন বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান। কেননা ১০ দিনের মধ্যে পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান কখনো (কোনো শীর্ষ সম্মেলন ছাড়া) এখানে আসেননি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা পৃথক সময়সূচিতে উদযাপনে যোগ দিতে আগত বিশিষ্ট বিদেশি অতিথিদের মধ্যে থাকবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাঁচটি দক্ষিণ এশীয় দেশের নেতাদের পরিকল্পিত সফর এবং বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার ভিডিও বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ব নেতাদের বৈশ্বিক আস্থার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদা সুগা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের কতিপয় উচ্চ-পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, তারা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।
মোমেন জানান, উদযাপনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পৃথক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। মোদি ঢাকার বাইরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারসহ তিনটি স্থান পরিদর্শনে যাবে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করবেন। এতে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউএস) স্বাক্ষরিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ভারতের সঙ্গে অন্তত তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের আশা করছে। এই সমঝোতা স্মারকগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এখনো এগুলো নিয়ে কাজ করছি। সমঝোতা স্মারকগুলো উভয় দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে হতে পারে।
মোমেন বলেন, আমরা এখনো প্রতিটি সমঝোতা স্মারক নিয়ে কাজ করছি। আমরা দুই একদিনের মধ্যে সমঝোতা স্মারকগুলোর চূড়ান্ত দৃশ্যপট দেখতে পাব।
কোন নেতা কখন আসছেন
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহম্মদ সোলিহ ১৭ মার্চ প্রথম বিশ্ব-নেতা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত-বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১৭ মার্চ বাংলাদেশে পৌঁছুবেন। তার পরে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসে দুই দিনের সফরে ১৯ মার্চ বাংলাদেশ পৌঁছুবেন।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী দুই দিনের সফরে ২২ মার্চ ঢাকা পৌঁছবেন। সফরসূচি অনুযায়ী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা সফর করবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকা পৌঁছবেন এবং পরের দিন দেশে ফিরে যাবেন।
সফরসূচি অনুযায়ী বিদেশি অতিথিরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এছাড়াও তারা বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজ উপভোগ করবেন এবং রাষ্ট্রীয় ভোজ-সভায় যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার পরিদর্শন এবং ঢাকার বাইরে দুটি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন। একটি মন্দির গোপালগঞ্জে এবং অপরটি সাতক্ষীরায় অবস্থিত।
মন্দির দুটি বিশেষত হিন্দু মাতুয়া সম্প্রদায়ের প্রার্থনাস্থান। সম্প্রদায়টির একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাস করে।