সৌদি আরব সাত দশক ধরে চলমান কাফালাব্যবস্থা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কফিল বা নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। এতে নানা বঞ্চনা, নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি আয় বাড়ানোরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের জন্য এটি বড় সুখবর।
বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, একজন কর্মী এক বছর চাকরি করার পর তার নিয়োগকর্তা বদল করতে পারবেন। চুক্তি অনুযায়ী চাকরি ছাড়ার আগে নোটিশ দিতে হবে। তবে বাসার গাড়িচালক, বাসার কেয়ারটেকার ও ছেলে গৃহকর্মীরা এ সুযোগ পাবেন না।
কাফালা পদ্ধতি বলতে বোঝায় কোনো এক ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া। এর আগে কোনো কর্মী নির্যাতিত বা বঞ্চিত হলে মামলার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারতেন। এখন আর সেই জটিলতা থাকছে না। নতুন চাকরি নিয়ে তিনি পুরনো নিয়োগকর্তাকে নোটিশ দিতে পারবেন। সাধারণত ১৫ দিন বা এক মাসের নোটিশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে দেশটিতে।
এদিকে অভিবাসন–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় সৌদিতে চালু থাকা কাফালাব্যবস্থা সারা বিশ্বে ‘দাসপ্রথা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। দীর্ঘদিন ধরেই শ্রম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটি বাতিল করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে চাপ দিয়ে আসছিল। কাতার কাফালাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে দুই বছর আগে। নতুন নিয়োগকর্তা পছন্দ করার সুযোগ নারী গৃহকর্মীদের জন্য একটি বড় সুখবর।
প্রবাসীরা বলছেন, নিয়োগকর্তার সঙ্গে কর্মীকে একটি চুক্তিনামায় সই করতে হয়। অধিকাংশ কর্মী ভালো করে না পড়েই এসব চুক্তিতে সই করেন। এতে চুক্তি ভঙ্গের দায়ে কারাগারেও যেতে হয় অনেককে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে নিয়োগকর্তা কর্মীকে নিখোঁজ দেখাতে পারেন। এতে কর্মীর নামে ‘ওয়ান্টেড’ নোটিশ জারি করে সৌদি সরকার। এটিকে ‘হুরুব’ বলে। এমন কর্মীকে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে তিনি পরবর্তীতে আর কখনও আর সৌদিতে যেতে পারেন না।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, অনেক বড় আন্তর্জাতিক আন্দোলনের ফল এটি। কর্মীদের সুফল পেতে হলে বুঝেশুনে চুক্তি করতে হবে। আর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় নারীরা। তাই নারী কর্মীদের জন্য এটি একটি বিরাট সুযোগ তৈরি করেছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী সৌদি গেছেন। এখন ২০ লাখের বেশি কর্মী দেশটিতে কাজ করেন। এর মধ্যে তিন লাখের মতো নারী গৃহকর্মী রয়েছেন।
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদিতে বাংলাদেশের কর্মীদের অধিকাংশই কাজ করেন অবকাঠামো খাতে ও বাসায়। অদক্ষ কর্মীরা ভালো করে না জেনেই দালালের প্রলোভনে পড়ে দেশটিতে যান। এসব খাতের শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করা, মজুরি কম দেয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করার মতো গুরুতর অভিযোগ মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে। আইন সংস্কারের ফলে এসব ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।