মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার জাতিসংঘের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এমন খবর দিয়েছে।
নারী ও শিশুসহ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ বলছে, রোববারও ৩৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইয়াঙ্গুনের হ্লায়িং থায়ের এলাকার বাসিন্দা। আর শনিবার নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং সোমবার নিহত হয়েছেন ২০ জন।
গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ আটক বিক্ষোভকারীদের মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এ বিক্ষোভ চলছে।
মিয়ানমারের বেসারিক নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
এদিকে মিয়ানমারে চীনবিরোধী ঘৃণা-বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে। সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় সন্দেহ-অবিশ্বাস আরও জোরালো হচ্ছে। অভ্যুত্থানের নেপথ্যে বেইজিংয়ের হাত রয়েছে বলেও মনে করছে দেশটির জনগণ।
ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমনে একটা ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই অভ্যুত্থানবিরোধী হাজার হাজার মানুষকে ইয়াঙ্গুনে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।
তবে এবার বিক্ষোভের সঙ্গে ‘সরাসরি অ্যাকশন’ নিচ্ছে জনতা।
মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে চীনা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা পুড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক ডজন কারখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের এমন কর্মকাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি নিজে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
চীনের বিদেশনীতিতে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানকে অভ্যন্তরীণ সংকট আকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ অভ্যুত্থানবিরোধী বিবৃতি দিতে গেলে সেখানেও আপত্তি তুলেছে বেইজিং।
ভারত, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে মিলে তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের অনেকেই তাই মনে করেন, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে চীনের সমর্থন রয়েছে। দ্য ইরাবতী জানায়, বাণিজ্যিক রাজধানী ও ইয়াঙ্গুনে চীনা অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কয়েকটি কারখানা সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়ায় রোববার চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। একই এলাকায় সোমবার সকালেও আগুন দেওয়া হয় আরও কয়েকটি কারখানায়।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতেও উঠে এসেছে চীনা কলকারখানায় অগ্নিসংযোগের চিত্র।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত রাখতে এদিন মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ। এতে দফায় দফায় বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন। এসব ঘটনার পর পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় চীন।