বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ.ম.উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার অনেক স্মৃতি যা বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে আমার সৌভাগ্য এই জন্য যে খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর মত হিমালয়ের মত বড় মানুষের, আদর,স্নেহ ও মমতা আমি পেয়েছি।
আজ বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২১ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের বক্তৃতার পর বিশ্ব বিখ্যাত বুদ্ধি ভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকা নিউজ উইক বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ নামে উপাধি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি, পৃথিবীতে রাজনীতির কবি খুব কম আছে।
তিনি বলেন, পৃথিবী বিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড প্যারাডাইন ফ্রস্ট ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার শক্তির উৎস কি? তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘ আই লাভ মাই পিপল’ I আমি জনগণকে ভালোবাসি, এটাই আমার শক্তি।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, মানুষকে ভালোবাসা একটা বিশাল ব্যাপার। ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে আবার প্রশ্ন করেন, আপনার দুর্বলতা কি? বঙ্গবন্ধু তখনও বললেন ‘ আই লাভ দেম টু মাচ’। মানুষের ভালোবাসা-ই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচিয়েছিল। জনগণ নিজেদের জীবন বিনিময় স্লোগান দিত ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথমে টুঙ্গী পাড়ার খোকা, মুজিব ভাই, মুজিব মিয়া,শেখ সাহেব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার উপাধি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন করায় তাঁর মহাত্ম বাড়েনি, বরং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন করে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। যারা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন করে না তারা কৃতঘ্ন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সময় আমাদের মূলত শিক্ষার হার ছিল ৩০% নীচে, বার্ষিক খাদ্য ঘাটতি ছিল ৩৭ লক্ষ মেট্রিক টন, কিন্তু বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্ব- নির্ভর।
পাকিস্তান মানুষকে বর্ণে, ধর্মে শ্রেণি বিভাজন করত। ধর্মের মধ্যে কে সুন্নী, কে কাদিয়ানী তা বিবেচনা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মানুষকে মানুষ হিসেবে মনে করতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘মানুষ নিয়ে আমার যত ভাবনা তা আমার আছে, বাঙালি নিয়ে ভাবনা তা আমার আছে।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে যে স্বাধীনতার ডাক দিয়ছিল তার ফর্মালি বলেছেন ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের গভীর রাতে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী সরকারিভাবে পালনের সিদ্ধান্ত যখন জাতির পিতার কন্যা নিয়েছিলেন, তখন সৌভাগ্যক্রমে আমি তাঁর একান্ত সচিব ছিলাম। তখন এই দিবসটিকে জাতীয় শিশু দিবস করার প্রস্তাব করেছিলাম। কারণ বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালবাসতেন। তিনি জানতেন শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি একমাত্র রাষ্ট্র নায়ক যিনি জাতিসংঘের ৭টি ভাষার বাইরে বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে ট্রান্সলেট করা হয়েছিল। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধমুক্ত,বিজ্ঞান মনস্ক, চিন্তা ভিত্তিক বিশ্বের কথা বলেছিলেন।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁনের সভাপতিত্ব সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার।