আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ে সফরকে সামনে রেখে ঘোষিত ৩৫ সদস্যের স্কোয়াড নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
দলে জায়গা হয়নি জাতীয় দলের তারকা অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমের। সবশেষ কায়েদ-এ-আজম ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কামরান গুলামেরও ঠাঁই হয়নি। টেস্টে নেওয়া হয়নি এই সময়ের সেরা পাক ব্যাটসম্যান উসমান সালাউদ্দিনকে।
এসব প্রসঙ্গ তুলে পিসিবির ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন দেশটির সাবেকসহ মাঠের বাইরের তারকারা।
এমন বিতর্কিত স্কোয়াডে ঠাঁই হয়েছে শাহনেওয়াজ ধানি নামের এক তরুণ পেসারের। টেস্ট দলের নতুন মুখ তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে জিম্বাবুয়ের মাটিতে পাকিস্তানের সাদা জার্সিতে অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে শাহনেওয়াজ ধানির।
কে এই শাহনেওয়াজ ধানি? হঠাৎ কী করে জাতীয় দলের নিজের জায়গা করে নিলেন? সেই কৌতূহল পাক ক্রিকেটপ্রেমীদের।
সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে যে কেউ বিস্মিত হবেন। হবেন আবেগাপ্লুত।
কারণ চরম দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে আজ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলতে যাচ্ছেন শাহনেওয়াজ ধানি। শাহনেওয়াজ এমন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছেলে যেখানে টেলিভিশনের দেখা মেলে না সচরাচর। ইন্টারনেট, স্মার্টফোনও ব্যবহার খুব একটা হয় না। পিএসএল, আইপিএলের খবরই রাখে না সেই গ্রামের বাসিন্দারা।
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) শাহনেওয়াজের অংশ নেওয়ার পর থেকেই তার গ্রামের মানুষ এই টুর্নামেন্টের নাম জানতে পারে।
এর চাইতেও অবাক করা যে বিষয় ক্রিকেটপ্রেমীদের আপ্লুত করবে তাহলো, ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাট-বল কিছুই ছিল না শাহনেওয়াজ ধানির। এমনকি জুতাও ছিল না তার। বন্ধুর কাছ থেকে জুতা ধার করে অনূর্ধ্ব-১৯ এর ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন ধানি। আর সেই জুতাই বদলে দেয় ধানির ভাগ্য।
প্রোপাকিস্তানিসহ পাকিস্তানের বেশ কিছু গণমাধ্যমে উঠে এসেছে শাহনেওয়াজ ধানির দারিদ্রপীড়িত জীবন ও সেখান থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার গল্প।
জানা যায়, পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের লারকানার খুহাওর খান ধাহানি নামের এক ছোট্ট গ্রামে অনেক সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন ধানি। গ্রামে টেপ-বলে খেলেই ক্রিকেট শিখেছেন। দারিদ্রপীড়িত পরিবার ধানির এই ক্রিকেটাসক্ত পছন্দ করত না। ধানির বাবা চাইতেন ছেলে পড়াশুনায় বেশি মনোযোগ দিক। আর সংসারে সহযোগিতা করুক।
পড়াশুনার ফাঁকে ধানি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন। গম ও ধান চাষে সহায়তা করতেন বাবাকে। এরই মধ্যে পড়ালেখা ও ক্রিকেটকে চালিয়ে যেতেন। ধানির বাবা চাইতেন ছেলে পড়ালেখা করে সরকারি চাকরি পাবে। সংসারের অনটন ঘুচাবে।
ধানি ঠিকই পড়াশুনা করেছেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অর্জন করেন বি-কম ডিগ্রি। এরইমধ্যে তার বাবা মারা যায়।
একদিন ক্রিকেটর প্রতি ছোটভাইয়ের প্রবল ঝোঁক দেখে ধানির বড়ভাই তাকে উৎসাহ দেন।
ভাইয়ের উৎসাহে ধানি বন্ধুর কাছ থেকে জুতা ধার করে অনূর্ধ্ব-১৯ এর ট্রায়ালে অংশ গ্রহণ করেন। ট্রায়ালে তিনি নির্বাচিত হন এবং আন্ত:জেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে সুযোগ পেয়ে যান। এবারের পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) মুলতান সুলতান্স তাকে দলে নেয়। সেখানেও আলো ছড়িয়েছেন।
পেশওয়ার জালমির বিপক্ষে অবিস্মরণীয় অভিষেক ঘটে তার। অভিষেকেই তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচে ফেরে মুলতান সুলতান্স। নেন গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট। ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন এই উদীয়মান পেসার।
এমন নজরকারা পারফরম্যান্স দেখিয়ে হঠাৎ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান বন্ধুর জুতা দিয়ে ট্রায়াল দেওয়া পেসার শাহনেওয়াজ ধানি।
জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে আপ্লুত কণ্ঠে ২২ বছর বয়সী ধানি বলেন, ‘আমার বাবা আজ আমাদের মাঝে নেই। বাবা আমার ক্রিকেটে সময় দেওয়া পছন্দ করতেন না। তবে আমি নিশ্চিত আমাকে আজকের অবস্থানে দেখলে বাবা অনেক গর্বিত হতেন।’
আগামী মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিন ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান দল। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ওয়ানডে দিয়ে লড়াই শুরু হবে। এরপর জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২টি টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলার কথা রয়েছে পাকিস্তানের।
পাকিস্তান টেস্ট দল
বাবর আজম (অধিনায়ক), ইমরান বাট, আবিদ আলী, আব্দুল্লাহ শফিক, আজহার আলী, ফাওয়াদ আলম, সৌউদ শাকিল, আগা সালমান, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সরফরাজ আহমেদ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, তাবিজ খান, হাসান আলী, শাহনেওয়াজ ধানি, নুমান আলী, জাহিদ মাহমুদ এবং সাজিদ খান।