নাসরিন-১ লঞ্চডুবি: নিহতদের পরিবারপ্রতি ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

চাঁদপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় সাড়ে ১৭ বছর আগে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ ডুবিতে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

নিম্ন আদালত থেকে নিহত ও নিখোঁজ ১৭১ জনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই রায়ে ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং আহত একজনকে এক লাখ টাকা দিতে রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করলেও সম্প্রতি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের করা মামলা খারিজ করে হাইকোর্ট এ রায় দেন। রায় অনুযায়ী নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ ২০ বিবাদীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

হাইকোর্টের ১৩৩ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, ঘটনার দীর্ঘ ১২ বছর পর প্রচারিত একদরফা রায় ও আংশিক ডিক্রি কৌশলগত কারণে রদ ও রহিত করে পুনরায় শুনানির জন্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হলে বিবাদীপক্ষ কোনো প্রতিকার পাবে বলে নির্ভরযোগ্য যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। রায়ে বলা হয়, এটা দিবালোকের মতো পরিস্কার যে এ মামলায় বিবাদীপক্ষের প্রতিকার পাবার সম্ভাবনা নেই। একারণে ওই রায় ও আংশিক ডিক্রি রদ ও রহিত করা ন্যায়সংগত নয়। ন্যায়বিচারের স্বার্থে নিম্ন আদালতের রায় ও আদেশ হস্তক্ষেপযোগ্য নয়। তাই রুলটি খারিজ করা হলো।

চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ২০০৩ সালের ৮ জুলাই এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ১১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিখোঁজ হন ১৯৯। এছাড়া জীবিত উদ্ধার করা হয় ২৩০ জনকে। ওই নৌ দুর্ঘটনায় লঞ্চটির মালিকও নিহত হন। এরপর একইবছর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক লঞ্চ ডুবিতে ক্ষতিগ্রস্থ ৪শ জনের তালিকা প্রকাশ করেন। সেই তালিকা অনুযায়ী নৌ-দুর্যোগ ট্রাস্টি বোর্ড নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের দেওয়া ক্ষতিপূরণ অপ্রতুল দাবি করে ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে নিহতদের পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ মামলা করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট(ব্লাস্ট)। এ মামলায় ২৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। মামলায় নিহতের সংখ্যা বলা হয় একশ ২১ জন। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৭ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা দিতে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়, সমুদ্র পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ), ঢাকা নদী বন্দরের পরিচালক, অভ্যন্তরীন নৌযান মালিক সমিতির সভাপতিসহ ২১ বিবাদীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে লঞ্চটি মালিক মো. মামুন নিজেই মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় বিবাদীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জন। রায়ে বলা হয়, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের অবহেলা চরমভাবে দায়ী।

নিম্ন আদালতের এই রায়ের পর বিবাদীরা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একই আদালতে আবেদন করলে ওই আদালত ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট তা খারিজ করে দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ-সহ বিবাদীপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে। হাইকোর্ট পরদিন নিম্ন আদালতের রায় কেন বাতিল ও রদ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন খারিজ করে রায় দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন