ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় হাজী এফাজ উদ্দিন মার্কেটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)-টেলিভিশনসহ প্রায় ছয় লাখ টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগে করা মামলা থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক সাইফুল ইসলাম শিশিরসহ ২১ জনকে।
সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অহিদ মিয়া। আগামী ২৫ মার্চ মামলার চার্জশিট গ্রহণের বিষয় শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে সাভারের আশুলিয়ায় কানাডিয়ান কলেজে ভাঙচুর এবং চেয়ার, সিলিংফ্যান ও কম্পিউটার চুরির অভিযোগে করা আরেক মামলায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তদন্তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তার অব্যাহতি চাওয়া হয়।
এসি-টিভি লুটের মামলার চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অহিদ মিয়া উল্লেখ করেন, মামলার বাদী নাসির উদ্দিন ও তার ভাই আবু বক্কর সোহেল ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে হাজী এফাজ উদ্দিন মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে ভোগ দখল করে আসছিলেন। কতিপয় আসামি মামলার বাদীর মার্কেট ও সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট মামলার এজাহারনামীয় আসামি সাইফুল ইসলাম শিশির, ডা. আব্দুল কাদের, আব্দুস সালাম, শেখ মো. আলমগীর হোসেন, সোহেল, আওলাদ হোসেন, রাসেল, মীর মোর্তুজা আলী বাবু, ডা. রেজাউল হক, ইসরাফিল, জুয়েল রানা, লুৎফর রহমান, আবুল কালাম, তোতলা কালাম, আব্দুস সামাদ, মুজাহিদ, ইকরাম হোসেন, আরিফ, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল লফিত, আব্দুল রহিম ও ইকবাল হোসেন ও তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভেকু মেশিন নিয়ে ওই মার্কেটের ২০টি দোকানঘর ও আবসাবপত্র ভাঙচুর করেন। এতে ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, ওই সময় বাদীর মার্কেটে থাকা ফুড প্যালেস হোটেল মালিক সাজ্জাদ হোসেন সজিদ বাধা দিলে আসামিরা তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। এক পর্যায়ে আসামি সোহেল হত্যার উদ্দেশ্যে তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। এছাড়া আসামিরা ফুড প্যালেস হোটেলসহ বিভিন্ন দোকান থেকে আনুমানিক ১০ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যান। সেসময় মামলার বাদী ও মার্কেটের দোকান মালিকরা এগিয়ে গেলে আসামিরা তাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। তবে তদন্তে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম-ঠিকানা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এতে আরও বলা হয়, এজাহারনামীয় আসামি সাইফুল ইসলাম শিশির, ডা. আব্দুল কাদের, আব্দুস সালাম, শেখ মো. আলমগীর হোসেন, সোহেল, আওলাদ হোসেন, রাসেল, মীর মোর্তুজা আলী বাবু, ডা. রেজাউল হক, ইসরাফিল, জুয়েল রানা, লুৎফর রহমান, আবুল কালাম, তোতলা কালাম, আব্দুস সামাদ, মুজাহিদ, ইকরাম হোসেন, আরিফ, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল লফিত, আব্দুল রহিম ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩৪২/৩২৩/৩০৭/৩৮০/৪২৭/৫০৬ ধারার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তবে মামলার তদন্তকালে এজাহারনামীয় গোলাম মোস্তফা ও সেন্টুর নাম ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি। এছাড়া আসামি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ প্রমাণের স্বপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই ডা. জাফরুল্লাহ, গোলাম মোস্তফা ও সেন্টুকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ আগস্টের ওই ঘটনার পরদিন ২২ আগস্ট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আসামিদের অভিযুক্ত করে আশুলিয়া থানায় ওই মামলা করেন নাসির উদ্দিন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অহিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাজী এফাজ উদ্দিন মার্কেটে লুটপাটের অভিযোগের মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এতে ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ মেলেনি বিধায় তাকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।