টসের সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, শুরুর দশ ওভার হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। হলো ঠিক তাই। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে যে নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, তা আর নিজেদের কাছে আনতে পারেনি সফরকারীরা।
ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে ব্যাটসম্যানদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে দেড়শ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্ট, জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনারদের বোলিং তোপে ১৩১ রানে গুটিয়ে গেছে টাইগারদের ইনিংস। ম্যাচ জিততে মাত্র ১৩২ রান প্রয়োজন স্বাগতিকদের।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ছোট ছোট শুরু পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান। কিন্তু কেউই তা কাজে লাগাতে পারেননি। সবাই সাজঘরে ফিরে গেছেন ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েই। যে কারণে ছয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছলেও, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি মাত্র ২৭ রানের।
ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ২০০৭ সালে কুইন্সটাউনে করা ৯৩ রান এখনও রয়েছে সর্বনিম্ন হিসেবে। আর ডানেডিনের মাঠে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন সংগ্রহই এটি। এর আগে ২০১০ সালে এই মাঠে করা ১৮৩ ছিল এতদিন ধরে টাইগারদের সর্বনিম্ন।
অথচ বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম স্কোরিং শটই ছিল ছয়। ট্রেন্ট বোল্টের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থের। জায়গা পেয়ে আপার কাটে থার্ড ম্যান দিয়ে ছক্কা হাঁকান তামিম। ম্যাট হেনরির করা পরের ওভারে দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইতিবাচক শুরুর ইঙ্গিতই দেন টাইগার অধিনায়ক।
কিন্তু সেটি আর বেশিক্ষণ টেনে নিতে পারেননি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরের পথ ধরেছেন বার্থডে বয়। বোল্টের সুইং করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে প্লাম্ব এলবিডব্লিউ হয়েছেন তামিম। এক চার ও এক ছয়ের মারে ১৫ বলে ১৩ রান করতে পেরেছেন তিনি।
তামিম নিজের খেলা তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকালেও, তিন নম্বরে নামা সৌম্য মুখোমুখি তৃতীয় বলে ধরেছেন প্যাভিলিয়নের পথ। বোল্টের একই ওভারের চতুর্থ বলটি ত্রিশ গজের বৃত্তের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু ব্যাটে-বলে টাইমিং করতে পারেননি। ফলে সহজ ক্যাচ উঠে যায় কভারে, যা লুফে নিতে ভুল করেননি অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ে।
বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়তে পারত হেনরির করা ষষ্ঠ ওভারেই। প্রথম বলেই আউটসাইড এজ হয়েছিল লিটন দাসের, বল চলে যায় প্রথম স্লিপে। সেটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরার চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক টম লাথাম। কিন্তু রাখতে পারেননি নিজের গ্লাভসে, ফলে জীবন পেয়ে যান লিটন।
প্রথম পাওয়ার প্লের দশ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময়ে ৩৩ রান করে বাংলাদেশ। এরপর কাইল জেমিসন আক্রমণে আসতেই প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তাকিয়ে স্বাগত জানান লিটন। যা তার ইনিংসের একমাত্র চার। ইনিংসের ১৪তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নেন নিশাম, সাজঘরে পাঠিয়ে দেন লিটনকে।
সেই ওভারের দ্বিতীয় বলটি এক্সট্রা বাউন্স করে উঠে যাচ্ছিল লিটনের শরীর বরাবর। আলতো ছোঁয়ায় সেটি অনসাইডে খেলার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু লিডিং এজ হয়ে ধরা পড়েন মিড অনে দাঁড়ানো ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। আউট হওয়ার আগে লিটন করেন ৩৬ বলে ১৯ রান।
দলীয় পঞ্চাশের আগেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবু আশার আলো হয়ে খেলছিলেন দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। কিন্তু তাকে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে দেননি নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিমি নিশাম।
টাইগারদের বিপদ বাড়িয়ে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিক। ইনিংসের ২২তম ওভারের প্রথম বলে নিশামের শরীর বরাবর করা এক্সট্রা বাউন্সের ডেলিভারিতে কাট করতে হয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েছেন মুশফিক।
আউট হওয়ার আগে ৪৯ বল খেলে ২৩ রান করতে পেরেছেন মি. ডিপেন্ডেবল খ্যাত এ ব্যাটসম্যান। মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর দূর্ভাগ্যের শিকার হন আরেক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। যার ফলে মাত্র ৭২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে এখন ধুঁকতে থাকে সফরকারীরা।
ইনিংসের ২৪তম ওভারে ফুল লেন্থ ডেলিভারিটি স্ট্রেইট ড্রাইভ করেছিলেন ছয় নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ফলো থ্রু’তে সেটি থামানোর চেষ্টায় হাত বাড়িয়ে দেন নিশাম। তার আঙুলে লেগে বল আঘাত হানে ননস্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। তখন পপিং ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ৯ রান করা মিঠুন। ফলে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর যা খেলার একাই খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মেহেদি হাসান মিরাজ ১ রান করে ফিরে গেলে উইকেটে আসেন অভিষিক্ত শেখ মেহেদি হাসান। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে কভার দিয়ে বিশাল ছক্কার মারে ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের খাতা খোলেন মেহেদি। তবে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
শেখ মেহেদির বিদায়ে দলীয় একশ রানের আগেই ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর তাসকিন আহমেদের সঙ্গে ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৭ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ১২৫ রানের মাথায় ফেরেন ৫৪ বলে ২৭ রান করা মাহমুদউল্লাহ। এরপর আর ৬ রান যোগ করতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একাই ৪ উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। এছাড়া নিশাম ও স্যান্টনারের ঝুলিতে গেছে ২টি করে উইকেট।