বৈশ্বিক মহামারি কারোনাভাইরাসের প্রকোপ দেশে অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবে গত কয়েক দিন ধরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় আবারও জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রোববার থেকে সারাদেশে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু করেছে বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি।
রোববারও করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। আর নতুন করে দুই হাজার ১৭২ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটির উপস্থিতি। করোনার এই নতুন ধাক্কা সামলাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখনই সাধারণ ছুটির কথা না ভাবলেও পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে যে ঘোষণা এসেছিল সেটা থেকেও ফিরে আসতে পারে সরকার।
রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার মুখে পড়তে হবে নাগরিকদের। মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বাড়ছে করোনা। সংক্রমণ ২ থেকে ১০ শতাংশে উঠেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে এখনই জরিমানার মতো কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের মাঝে এখন মাস্ক পরার অভ্যাসটা অনেকটা কমে গেছে। পুলিশ যদি এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে জনসচেতনতা বাড়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমবে।
ডিএমপির ১৪ হাজার মাস্ক বিতরণ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে রোববার রাজধানীতে ১৪ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। কর্মসূচি শুরুর প্রথম দিনে রাজধানীর বিমানবন্দর, ফার্মগেট ও রাজারবাগ এলাকায় ১৪ হাজার মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা ও তেজগাঁও বিভাগ।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন গোলচত্বর এলাকায় পাঁচ হাজার মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।
বিমানবন্দর গোলচত্বর, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, বিমানবন্দর রোডের বাসের যাত্রী, সাধারণ মানুষ ও শিশু,নারী-পুরুষ পথচারীদের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আজ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পাঁচ হাজার মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ। এ সময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাঠপর্যায়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ও জীবনধারা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পুলিশ আজ থেকে মাঠে কাজ করছেন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন পথচারী ও সাধারণের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) কৃষ্ণ পদ রায়।
এ সময় কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, মাস্ক ব্যবহারে আইন প্রয়োগ কিংবা জোর করে মানুষকে বাধ্য করতে চাই না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ও সচেতনতা সৃষ্টি করে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে চাই। আমরা আশা করছি, সবাই নিজের ঝুঁকি বুঝতে পেরে, বিপদ বুঝতে পেরে নিজ থেকেই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সারাদেশে তৎপর পুলিশ
এদিকে রোববার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশেই জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তৎপর ছিল পুলিশ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জনসচেতনতায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
সকালে যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিউদ্দিন যশোরের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ১৫ হাজার মাস্ক বিতরণ করেন।
পুলিশের উদ্যোগে সকালে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজের মোড়ে জেলা পুলিশ আয়োজিত মাস্ক ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন ভূইয়া। পরে পুলিশের কর্মকর্তারা পথচারীদের মাঝে মাস্কসহ করোনা সুরক্ষা বিতরণ করা হয়।
দুপুরে টাঙ্গাইল পুলিশের উদ্যোগে মাস্ক বিতরণসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাস্ক পরার উদ্বুদ্ধকরণ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পথচারী ও বিভিন্ন অফিস আদালতে চাকরিজীবীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
বেলা ১১টায় ভোলা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় র্যালি থেকে জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডে এক সচেতনতামূলক সভার আয়োজন হয়।
কুষ্টিয়ায় পুলিশের উদ্যোগে জনসচেতনতা ও মাস্ক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১ টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ লাইনচত্বর থেকে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুলিশ লাইন প্রধান ফটকে এসে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
নওগাঁ জেলা পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় সদর মডেল থানা চত্বর থেকে একটি র্যালি বের করে এবং পথচারীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
নাটোর জেলা পুলিশ আজ ৭০ হাজার মাস্ক বিতরণ করছে। বেলা ১১টায় শহরের স্বাধীনতা চত্বরে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
নীলফামারীতে বেলা ১২টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পথসভা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান। পরে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি সচেনতামূলক শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় বিভিন্ন যানবাহনে করোনা মহামারি প্রতিরোধে সচেতনামূলক স্টিকার লাগানো এবং পথচারীদের মধ্যে মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে ক্যাম্পিং ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে লক্ষ্মীপুর মডেল থানা। এসময় জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি জনগণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান।
এছাড়াও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নড়াইল, মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে অনুরূপ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।