রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে মুমূর্ষু রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেখা দিয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা সংখ্যার নিদারুণ সঙ্কট। করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেভ হাসপাতাল ঘোষণা করে। হাসপাতালগুলো হলো- রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ফুলবাড়িয়া, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ এবং মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল।
খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে এ হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য দুই হাজার ৩৮১টি সাধারণ শয্যা ও ১০টি হাসপাতালের আটটিতে সর্বসাকুল্যে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১০৩টি। আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ আটটি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৯৬ জন। শয্যা ফাঁকা রয়েছে মাত্র সাতটি। মাত্র সাতটি শয্যা ফাঁকা থাকায় আইসিইউ শয্যা এখন যেন সোনার হরিণ। খাতা-কলমে সাতটি শয্যা এখনও ফাঁকা থাকলেও বাস্তবে এগুলো অঘোষিতভাবে ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত রেখে দেয়ায় শয্যা সংখ্যা বলতে গেলে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
কিছুদিন ধরে অব্যাহতভাবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। আক্রান্তদের অনেকের শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়ায় স্বজনরা আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এক সরকারি হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ালেও সব হাসপাতাল থেকেই শয্যা ফাঁকা নেই বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে রাজধানীর ১০টি করোনা ডেডিগেকেটেড ঘোষিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৬টিতে, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি শয্যার ১০টিতে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টি শয্যার ১০টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, মহাখালীতে ১৬টির মধ্যে ১২টিতে রোগী ভর্তি অর্থাৎ চারটি বেড ফাঁকা রয়েছে। ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ছয়টি শয্যার পাঁচটিতে এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে ১৩টিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন। অর্থাৎ সেখানে দুটি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৩৮১টি সাধারণ শয্যায় এ মুহূর্তে রোগী ভর্তি এক হাজার ৭৬৮ জন।
অন্যদিকে রাজধানীর বেসরকারি নয়টি হাসপাতালে ৯৪০টি সাধারণ শয্যা এবং ২৬৭টি শয্যা রয়েছে। এসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২২২ জন। আইসিইউ শয্যা ফাঁকা মাত্র ৪৫টি। নয়টি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ বেডের ২১টিতে, আসগর আলী হাসপাতালে ৩২টির ২০টিতে, স্কয়ার হাসপাতালের নয়টির সাতটিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালের পাঁচটির পাঁচটিতেই, ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২টির ১৫টিতে, এভার কেয়ার হাসপাতালের ১২টির ১১টিতে, ইমপালস হাসপাতালের ৩৫টির ৩২টিতে, এ এমজেড হাসপাতালের ১০টির ১০টিতেই এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নয়টির পাঁচটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। ৯৪০টি সাধারণ শয্যার ৫০০টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে।
বিএসএমএমইউয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যে হাসপাতালে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
এদিকে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজার ৭০২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন তিন হাজার ৫৬৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আট হাজার ৭৬৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সরকারি ও বেসরকারি ২২১টি ল্যাবরেটরিতে ২৭ হাজার ৬৮৩টি নমুনা সংগ্রহ ও ২৭ হাজার ৫০২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও তিন হাজার ৫৬৭ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮ জন। মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮৬টি। ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯১৫ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৯০৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
দেশে গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যুবরণকারী আট হাজার ৭৬৩ জনের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৬২৫ জন (৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ) ও নারী দুই হাজার ১৩৮ জন (২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ)।