সরকার দেশের বেকার যুবসমাজকে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে যাচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে যাতে ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে উদ্যোগ একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এ প্রশিক্ষণ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট ফোন কোম্পানিগুলো একেবারে স্বল্পমূল্যের বিশেষ ডেটা প্যাকেজও চালু করবে। যাতে যে কারও পক্ষে অনলাইনে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব সহজ হয়। এ সুবিধা দিতে এগিয়ে এসেছে দুটি মুঠোফোন কোম্পানি। প্রশিক্ষণ শেষে অনলাইনে আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্রও মিলবে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন। তিনি জানান, আজ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ডিজিটাল যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। বলা যায়, প্রায় সবকিছুর মধ্যে ইন্টারনেট বা অনলাইন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। সে কারণে বিদ্যমান যুবগোষ্ঠী ছাড়াও প্রতিবছর নতুন করে যুবতালিকায় যুক্ত হওয়া লাখ লাখ যুবক ও যুবনারীকে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করা হবে।
তিনি বলেন, অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে বিভিন্ন কাজেও যুক্ত হতে পারবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশে ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ৮৪টি ট্রেডে বেকার যুবক ও যুবনারীদের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন এসব কেন্দ্র থেকে অনলাইন প্ল্যাটফরমেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেজন্য সফটওয়্যার ও হোস্টিং ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিন ২৬ মার্চ থেকে এ কর্মসূচির শুভযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষমেশ হচ্ছে না। প্রস্তুতি শেষ না-হওয়ায় সেটি শুরু করা যাচ্ছে না। আগ্রহী প্রক্ষিণার্থীরা নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার পর অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে তাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে না।
নামমাত্র মূল্য দিয়ে শুধু এই প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ডেটা প্যাকেজ কিনে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সময়কালের জন্য গ্রামীণফোন ও টেলিটক প্রশিক্ষণার্থীদের এ সুবিধা দেবে। এজন্য ইতোমধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি প্রথম ধাপের চুক্তি বাস্তবায়নে হোস্টিং চার্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশের জোগান দেবে ফোন কোম্পানি। এ ছাড়া প্রথম বছরে এ খাতে সরকারের অংশে খরচ হবে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই অর্থ সংস্থানের জন্য শিগগির অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আজহারুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফরমে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি সফল কর্মসূচি হবে। বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যেখানে প্র্যাকটিকেলি বা সরাসরি প্রশিক্ষণ দিতে পারছি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ, সেখানে এটি তখন ৩০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে। ফলে কর্মসংস্থান সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া অনেকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যেমন নিজের বেকারত্ব ঘোচাবে, তেমনি আরও অনেকের কাজের ব্যবস্থা করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে তিন লাখ যুব ও যুবনারী প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। ১৮-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবগোষ্ঠী ধরা হয়। এ হিসাবে প্রতিবছর নতুন করে যুবসমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ২০-২২ লাখ। বর্তমানে দেশে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ যুব ও যুবনারী রয়েছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে যেসব খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড হাউজওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশন, পোশাক তৈরি, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং, মৎস্য চাষ, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং এর প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ, মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন এবং গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ ও বিপণন, মৎস্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট উৎপাদন, কৃষি ও হর্টিকালচারবিষয়ক, ফুল চাষ, নার্সারি ও ফল চাষ, মাশরুম ও মৌচাষ, কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত, ফ্যাশন ডিজাইন, ওভেন সুয়িং মেশিন অপারেটিং, ব্লক প্রিন্টিং, টুরিস্ট গাইড, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এবং বিউটিফিকেশন অ্যান্ড হেয়ারিং প্রভৃতি।