আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও কী কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ভারতে চলে যাচ্ছে? কারণ কী? এটাই কারণ, এই সময়ে তাদের ওপর নির্যাতনের পরিমাণ আরও বেশি করে বেড়ে গেছে। লক্ষ্যই হচ্ছে এটা তাদের সম্পত্তি দখল করা, তাদের বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা এবং মালামাল লুট করা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
পাকিস্তান আমলে তৈরি শত্রু সম্পত্তি আইন সরকার বাতিল করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে মুখে বলে যে, তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে চান, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ তারা রক্ষা করতে চান, কিন্তু এখন পর্যন্ত শত্রু সম্পত্তি আইন তারা বাতিল করেনি, তাদের যে ন্যায্য অধিকারগুলো রয়েছে তা দেয়নি।
বিএনপির শাসনামলে ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া মাত্রা বেশি ছিল বলে আওয়ামী লীগ বলছে, এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি যে বক্তব্য দেব যেটা আমার দলীয় বক্তব্য হবে- তাই না। আপনারা যে ইনভেস্টেগেটিভ জার্নালিজম করছেন সেখান থেকে তো আপনারা দেখতে পারবেন। প্রত্যেকটা রিপোর্টে যেটা আসছে, এই সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভারতে যাওয়া বেড়ে গেছে।
সেটা কি ২০০১ সালের থেকেও বেশি কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেক বেশি, অনেক বেশি..। নিঃসন্দেহে। এটা আমার কথা না তো, আমেরিকা্ই তো পারসেন্টেজ বলে দিয়েছে কত পারসেন্ট যাচ্ছে। তাদের পত্র-পত্রিকায় আসছে তো।
সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বছর দুয়েক আগে ঠাকুরগাঁওয়ে একজন প্রভাবশালী এমপি তিনি কয়েক‘শ জমি দখল করেছিলেন। সেটার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মিছিল করেছে, মানববন্ধন করেছে, কিন্তু কোনো সুরাহা বা সমাধান পায়নি। ফরিদপুরেও এরকম ঘটনা। এবারে দেখেন, শাল্লার ঘটনার নেতৃত্বে দিচ্ছে সবখানে এসছে যে, যুবলীগের নেতা। অথচ ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন, এখানে বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছে। বিএনপির নামগন্ধ নেই এখানে। অর্থাৎ এটা হচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করা, মানুষকে ভুল বোঝানো, মানুষকে যে একটা ভুল রাস্তায় নিয়ে যাওয়া, সেটাই তাদের লক্ষ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনোই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষের শক্তি ছিল না বা এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে তারা কখনোই ছিল না। বরাবরই তারা যেমন সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে ঠিক একই সম্পত্তি দখল করেছে সেই কায়দায়।
সংবাদ সম্মেলনে শাল্লায় ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শাল্লায় হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁ গ্রামে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ি, মন্দিরে উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও নারকীয় ধ্বংসযোগ্য চালানো হয়। আমরা সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীদের বাড়ি-ঘরে, উপাসনালয়ে অবর্ণনীয় ধ্বংসলীলা দেখতে পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তরা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় অকপটে বলেছেন, ঘটনার দিন মাইকে প্রচার করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা স্বাধীন মিয়ার নেতৃত্বে তার অনুসারী শত শত মানুষ ওই গ্রামে উপস্থিত হয়ে প্রায় ৬০/৭০টি বাড়িঘরের সমস্ত মালামাল ও আসবাবপত্র লুটপাট করতে থাকে। বাড়ি ঘরের জানালা, দরজা, বেড়া কুপিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে, নারী পুরুষ ও শিশুদের মারধর করে।
নিতাই রায় বলেন, শিশু বাচ্চাদের নিয়ে বাথরুমে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকা মহিলাদের বের করে এনে লাঞ্ছিত করে। আওয়ামী যুবলীগের সন্ত্রাসী হারমাদ বাহিনী হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
প্রশাসনের গাফিলতি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রচ্ছন্ন মদদে শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন মিয়া। অন্যান্য আসামিরাও ক্ষমতাসীন দলের। এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।
সুনামগঞ্জের ঘটনায় দায়িদের শাস্তি দাবি করে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, মন্দির, উপাসনালয় পুনঃনির্মাণ ও পুনর্বাসনে সরকারকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসার এবং ওই এলাকাসহ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত অন্যান্য এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ২০ মার্চ নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী শাল্লায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন দলের কাছে জমা দেন।
গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।