বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসের একদিন আগে যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম দফায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই তালিকা প্রকাশ করেন।
তালিকায় ঢাকা বিভাগের বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৩৭ হাজার ৩৮৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ হাজার ৫৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ হাজার ৫৬৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৭ হাজার ৬৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ হাজার ৫৮৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ হাজার ৮৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ হাজার ১৫৮ জন, সিলেট বিভাগে ১০ হাজার ২৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
প্রকাশিত এই তালিকা আজকেই (বৃহস্পতিবার) মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আমরা ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করলেও তাদের কোনো তালিকা করতে পারিনি। বিলম্বে হলেও আমরা সে তালিকা করা শুরু করেছি। দেশের প্রখ্যাত গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। প্রথম ধাপে আমরা ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করছি। আরও যাচাই-বাছাই এবং আপিল শুনানি শেষে ৩০ জুন ২০২১ এর মধ্যে যাচাই-বাছাইধীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা পরের ধাপ ৩০ জুন প্রকাশ করা হবে।
মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে গ্যাজেটধারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন করে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করতে পারবে না। যারা আগে আবেদন করে রেখেছেন তারা শুধু রিভিউ ও আপিল করতে পারবেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গণশহিদদের কীভাবে সম্মানিত করা যায় সেটা আমরা ভাবছি।
মন্ত্রী বলেন, প্রকাশিত তালিকায় যদি কারও কোনো তথ্যে মিল না থাকে তাহলে ভাতা পেতে বিভ্রান্ত হতে পারে। সেজন্য আমরা এক বছর যাচাই-বাছাই করেছি। শতবাগ নির্ভুল করার জন্য সময় নিয়েছি। তারপরও ভুল থাকতে পারে। তবে সেই ভুল তেমন বড় কোনো কিছু হবে না।
তিনি বলেন, আজকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৫ জনের নাম প্রকাশ করা হলো। বাকিদের যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে। মোট ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি হবে না বলে জানান মন্ত্রী।
তালিকায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের নাম প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাকের নামসহ অনেকেই এই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু অপকর্মসহ যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনের সহযোগিতা ও খুনি হিসেবে তাদের নামের পাশে তাদের কর্ম উল্লেখ থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি যার যার অর্জন। সেটা কেউ বাতিল করতে পারবে না। তবে তাদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছে। খেতাবটা একটি সম্মান। সেটি যে কোনো সরকার সম্মান দিতে পারেন, আবার চাইলে যে কোনো অপরাধের জন্য ফিরিয়ে আনতে পারেন।
উল্লেখ্য, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের জন্য গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঁঞা। কমিটিতে সদস্য-সচিব হিসেবে রয়েছেন উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত।
কমিটিতে গবেষক সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীরপ্রতীক)।