বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শুরুর কয়েক ঘণ্টা পূর্ব মুহূর্তে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে বাংলাদেশে নিরস্ত্র এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা সেই কালরাতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা করে। সেদিন রাত ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা চালায়। কেননা তারা জানত বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী কোনো দিন পাকিস্তানিদের দখলদারিত্ব মেনে নিবে না। এজন্যই তারা চেয়েছিল সেখানকার বীর সন্তানদের শেষ করে দিতে। সেখানে হামলা চালানোর পরই তারা প্রথমবারের মতো প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় এবং আমাদের পুলিশ বাহিনীর সহযোদ্ধারা কঠিন প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হন কিন্তু সারারাতব্যাপী লড়াই চালিয়ে গেলেও পাকিস্তানি বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রের সামনে শেষ পর্যন্ত তারা টিকতে পারেননি।
২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে শহিদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সেদিন তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনেও হামলা চালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তখন তাৎক্ষণিকভাবে বেতারের মাধ্যমে ১২টা ১ মিনিটে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা সম্পর্কে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনী প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিও’র সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো পূর্বেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’
তিনি বলেন, ২৫শে মার্চ সারারাতব্যাপী যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তা অত্যন্ত বিভৎস ও নারকীয়। আমরা ঐসব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পেতে আমরা বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের দাবি জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আল-মামুন সরকার।