বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অন্যতম কণ্ঠযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম নারী কণ্ঠশিল্পী নমিতা ঘোষ। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
প্রবীণ এই কণ্ঠশিল্পী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বোন কবিতা ঘোষ। তিনি জানান, নমিতা ঘোষের মরদেহ বর্তমানে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর পোগোস স্কুল মাঠে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। তবে তার শেষকৃত্যের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সেরে উঠেছিলেন নমিতা ঘোষ। নিয়মিত হয়েছিলেন গানে। সবশেষ গত ১২ মার্চ তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি আয়োজনে অংশ নেন। এর একদিন পরই তিনি জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হন। প্রথমে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতাল, পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা করান।
কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ার গত ১৬ মার্চ পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হন নমিতা ঘোষ। সেখানে তার করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তিনি পপুলার হাসপাতালের এইচডিওতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৬ মার্চ রাতে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নমিতা ঘোষ মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। তার মা জসোদা ঘোষ সে সময় রেডিওতে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করতেন। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে ২৭ মার্চ বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কেরাণীগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা দিয়ে আখাউড়া সীমান্ত পার হন তারা।
নরসিঙ্গরে গিয়ে বাংলাদেশি আরও দুই কণ্ঠযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ও আপেল মাহমুদের সঙ্গে দেখা হয় নমিতার। তখন সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে অনুপ্রেরণা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছিল। আগরতলায় থাকতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজে যুক্ত হন নমিতা। পরে সেই প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে দেখানো হয়।
১৯৭১ সালের মে মাসে মায়ের সঙ্গে আগরতলা থেকে বিমানে করে কলকাতায় পৌঁছান নমিতা। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম প্রেস সচিব, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমিনুল হক বাদশার উৎসাহে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে।