মিয়ানমারে শনিবার জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১৪ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। দেশটিতে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এক দিনে এত মৃত্যু আর দেখা যায়নি। এদিন দেশটিতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করে সেনাবাহিনী।
দিবসটিকে কেন্দ্র করে আগের দিন বিক্ষোভকারীদের মাথা ও পিঠে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই হুমকি উপেক্ষা করেই রাজপথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। তখনই তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করে জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দেশের জনগণকে রক্ষা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী।
তবে দিনটিকে ‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি লজ্জার দিন’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির ছায়া সরকারের মুখপাত্র ড. সাসা। তিনি বলেন, বিক্ষোভের সময় তিনশর বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যার পর তারা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপন করছে।
সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, নেপিদো ও মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই সঙ্গে কঠোরভাবে তা দমন করতে শুরু করে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ইয়াঙ্গুনে গুলিতে ৭ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মান্দালয়ে গুলিতে প্রাণ গেছে ১৩ জনের।
শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বিক্ষোভকারীদের বলা হয়েছে, আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিক্ষোভে গেলে আপনারা মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী দিবস ঘিরে জান্তাবিরোধী যে কোনো বিক্ষোভ মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। তবে এই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই শনিবার রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা।
ইয়াঙ্গুনের দালা নামক উপশহরে স্থানীয় থানার কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ইনসেইন শহরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। সেখানে নিহতদের মধ্যে একজন দেশটির অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সাগাইং অঞ্চল, লাশিও শহর, বাগো এলাকায়ও বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, গণতন্ত্রের সুরক্ষায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুরো জাতির সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে চায়। যে দাবিতে নৃশংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, যার ফলে দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিনষ্ট হচ্ছে, সেটা সঠিক দাবি নয়। তবে কবে নাগাদ তিনি এই নির্বাচনের আয়োজন করবেন,; তা নিশ্চিত করে বলেননি। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির বেআইনি কার্যকলাপের কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত বিক্ষোভকারীর সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গুলিতে এবং তাদের এক-চতুর্থাংশের মাথায় গুলি করা হয়েছে।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। সেনাবাহিনী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জান্তা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সঙ্গে দমন-পীড়নও জোরদার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।