‘হেফাজত নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে মানুষের অধিকার হরণ করেছে’

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী
ফাইল ছবি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত যে তাণ্ডব চালিয়েছে, সেখানে আমরা যদি এসব দমনের জন্য বল প্রয়োগ করতাম তাহলে এখানে আরও অনেক লাশ পড়ত। কারণ তারা উগ্র, তারা কোনা নিয়মনীতি মানে না, তারা রাষ্ট্র, আইন সরকার মানে না। আজকে তারা আমাদের জনগণকে জিম্মি করেছে। তারা নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তাদের তাণ্ডবের কারণে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন থামে না।

২৮ মার্চ (রোববার) রাতে চ্যানেল আই এর টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

হেফাজতে ইসলাম কী আওয়ামী লীগ কিংবা রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী? এমন প্রশ্নের জবাবে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় সরকার রক্তপাত এড়ানোর জন্যই নমনীয়তা দেখিয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি রাষ্ট্রের উচিত হবে এখনই স্ট্রংলি তাদেরকে মোকাবেলা করা। আমি আশা করছি সরকার এবার তাদেরকে কোনো ছাড় দিবে না।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম আজকে যে হরতাল ডেকেছিল, আমি হরতাল ডাকাটা তাদের অধিকারে আছে কী অধিকার নেই সে কথা বলতে চাই না। অনেকেই মনে করেন হরতাল করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। এটি যদি আমি মেনেও নিই, তারপরও বলব আজকের হরতালে একটা নতুন ডাইমেনশন আছে। যেটা স্বাধীনতার পর পূর্বে কখনো ঘটেনি। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের বাড়ি ঘরে শুধু হামলাই নয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেনি। কারণ আমরা সেটি এজন্য করিনি যে, আমরা আশা করেছিলাম তারা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করবে এবং প্রশাসন সেখানে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। প্রশাসনের উপস্থিতিও সেইভাবেই ছিল।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারের আমলে হরতাল করেছে, আবার বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হরতাল করেছে, কিন্তু ঐসব হরতালে বসত বাড়িতে হামলা ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তারা সেটা ঘটিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আজকের হরতালে আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন তারা কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই রেলস্টেশন, ফুলের বাগানসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা তছনছ করেছে। আজকে তারা ভূমি অফিসে আগুন দিয়েছে। এর একটা কারণ খুঁজে পেয়েছি, সেটা হলো- ভূমি অফিসে আগুন লাগানোর পেছনে যারা ছিল, তাদের এখানে ভূমির ব্যাপারে কিছু ছিল যাতে ভবিষ্যতে ভূমিদস্যুতায় তস্করবৃত্তি করতে পারে। তারা পাঠাগারে আগুন দিয়েছে- এটারও একটা যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছি, সেটি হলো তারা আধুনিক পড়াশোনাকে মোকাবেলা করতে চায়।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় যে আক্রমণ হয়েছে সেটা হলো- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার শশুরের বাড়িতে আক্রমণ এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত, সেই সংগঠনের অফিসে আক্রমণ করা হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্তরকে তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই আধুনিকতার সাথে যে তাদের একটা সংঘাত আছে এতে স্পষ্টতই বুঝা যায়। কিন্তু রেলস্টেশন ও ফুলের বাগান কেন তারা নষ্ট করল? কোনো মানুষ তো ফুলের বাগান নষ্ট করতে পার না। হেফাজতের ভিতরে কোনো মানবতা বোধ নাই তারা দানব প্রকৃতির লোক বলেই এ কাজগুলো করেছে। আমি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এটা ঠিক যে আমাদের ব্যর্থতা আছে। কারণ আমরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মোকাবেলা করতে পারি নাই। তবে হ্যাঁ, এটাও ঠিক তাদেরকে যদি আমরা প্রতিহত করতে যেতাম তাহলে রক্তপাত আরও হতো এবং সেখানে হয়তো আমাদের হাতে বা তাদের হাতে আরও লোকক্ষয় হত। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। প্রশাসন হয়তো রক্তপাত এড়ানোর জন্যই কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি।

হেফাজতের অতীতের তাণ্ডবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা এখানে অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে সেসব ঘটনার জন্য যদি আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করাতে পারতাম তাহলে হয়তো আজ এসবের পুনরাবৃত্তি ঘটত না। কিন্তু আমরা ঐসব ঘটনার বিচার করতে পারিনি। এবার যেটা হয়েছে সেটাও যদি বিচার করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আরও ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে।

তাদের বিচার করা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বিচার করার দায়িত্ব হলো সরকারের। জনপ্রতিনিধিরা সরকার না। সরকার হলো রাষ্ট্রকাঠামোর ভিতরে যারা কাজ করেন তারা। সরকার হলো প্রশাসনযন্ত্র। কিন্তু প্রশাসনযন্ত্র কেন পারেনি এই ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। কারণ আমি প্রশাসনে যুক্ত কেউ নই। এটাকে যদি ব্যর্থতা বলেন এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই আমারও আছে।

হেফাজত কাদের হেফাজত করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেফাজত কাদের হেফাজত করছে তা তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। তারা বিএনপি ও জামাতকে হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম যে সংগঠনটি স্বাধীনতা ও জাতিরজনককে অস্বীকার করে দেশে বারাবারবনানা অরাজকতা সৃষ্টির পরও কেন এই দলটিকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না? জবাবে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এর উত্তর আমি দিতে পারব না। কারণ বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব আমার নাই। এ বিষয়ে আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন তারা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

শেয়ার করুন