হরতালে সহিংসতায় ক্ষুব্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল। ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের একদিন পর সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় রেলওয়ে জামে মসজিদের শবে বরাতের বয়ানে উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে তিনি বলেন, তিনি আর হেফাজতের সঙ্গে থাকবেন না।
হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আমির আবদুল আউয়াল রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব। তাঁর বয়ানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাঁর নিয়ে তুমুল আলোচনাও চলেছে।
সেই ভিডিও বার্তায় আব্দুল আউয়ালকে বলতে দেখা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে হরতালের দিন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ আর আর্মি আমাকে মসজিদে নজরবন্দি করে রেখেছিলেন। তারা আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ওপর থেকে সরাসরি অ্যাকশনে যাওয়ার অর্ডার রয়েছে। তাই আমি মিছিল নিয়ে হরতাল পালন করতে পারিনি। কিন্তু হেফাজতের একদল অতি উৎসাহী লোক আমাকে বুঝতে চাইছে না। অথচ সেদিন যদি আমি প্রশাসনকে উপেক্ষা করে হরতালের সমর্থনে বের হতাম, তাহলে হয়তো মসজিদে নামাজ পড়ার অবস্থা থাকতো না। মসজিদের সামনে কয়েকটা লাশও পড়তে পারতো।
আব্দুল আউয়ালকে আরও বলতে দেখা যায়, তখন কিন্তু আপনারাই লাশের পক্ষ নিয়ে বলতেন, মায়ের বুক খালি করে তোমাকে কে নেতৃত্ব দিতে বলেছে? তাই আমি এদিকেও যেতে পারিনি, ওদিকেও যেতে পারিনি। এখন আমার একটাই রাস্তা। আমি আমার জিম্মাদারি ছেড়ে দিলাম। আমি হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে আর থাকবো না। আমার আমির পদ দরকার নাই। আমার পক্ষ থেকে আর কোনোদিন ঘোষণা আসবে না। তোমরা যারা অতি উৎসাহীওয়ালা আছো, তোমরা বাবা হেফাজতে ইসলাম করো। আমার বয়স হয়েছে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না, কথা বলতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, সোমবার দোয়া মাহফিলের কথা ছিল ডিআইটি মসজিদে। কিন্তু তারা আমাকে সাইড করে দিয়ে দেওভোগ মাদ্রাসা মসজিদে দোয়া মাহফিল করতে বলেছেন। তারা বলেছেন, আমার মতো নেতার প্রয়োজন নেই। তারা যেহেতু আমাকে সাইড করে দিয়েছে তাই আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে হেফাজতের আমিরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিবো।’ তিনি বলেন, ‘আমি মুসল্লিদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি হেফাজতের আমিরের পদে থাকবো না।
জানা গেছে, গত রবিবার হেফাজতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মহাসড়কের কাঁচপুর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হেফাজতসহ হরতালের সমর্থনকারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭টি যানবাহনে আগুন, অর্ধশত যান-বাহন ভাঙচুর করে।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও বেশ চড়াও ছিল হেফাজতের কর্মীরা। ভাঙচুর করা হয় গণমাধ্যমের গাড়ি, মারধর করাসহ লাঞ্ছিত করা হয় বহু সাংবাদিককে। কিন্তু একেবারেই উল্টো চিত্র ছিল নারায়ণগঞ্জ শহরে। নগরীর ডিআইটি মসজিদ, যেটি হেফাজতের নেতাকর্মীদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, সেই ডিআইটি মসজিদে জেলা ও মহানগর হেফাজতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকলেও ভাঙচুর বা পিকেটিং কোনোটিই হয়নি।
এদিকে প্রবীণ এই আলেমের হেফাজত ছাড়ার ঘোষণা নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে এ পদত্যাগের বিষয়টিকে বিশাল ফাটল বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও এ সিদ্ধান্তে ‘নাখোশ’ মহানগর হেফাজতের নেতারা দাবি করেছেন, আব্দুল আওয়াল সংগঠন বুঝেন না। তিনি নেতৃত্ব দিতে বা গুছিয়ে কাজ করতে পারেন না।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছেন, পদত্যাগের বিষয়টি আবদুল আওয়ালের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি সংগঠনের নিয়ম মোতাবেক হয়নি। কারণ উনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাও। মসজিদে ওপেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না দিয়ে উনি দলীয় ফোরামে বিষয়টি বলতে পারতেন। তাছাড়া রবিবারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি উনি কি করে সকাল ১০টার মধ্যে বলে দিলেন শেষ হয়ে গেছে, যা আমাদের অবাক করেছে। এ নিয়ে কর্মীরা উনার ওপর ক্ষুব্ধ।