দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের বিশ্লেষণ: গৃহযুদ্ধের পথে মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারে প্রতিরোধ আন্দোলন
ছবি : ইন্টারনেট

টানা দুই মাস ধরে মিয়ানমারে সংঘটিত জান্তাবিরোধী আন্দোলনে ৫শ’ ছাড়িয়েছে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর সংখ্যা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে গণতন্ত্রকামীদের, ছাড়িয়ে গেছে সহ্যের সীমা। কারেন রাজ্যে বাঙ্কার খুঁড়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিরুপায় ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ।

এসব পর্যবেক্ষণ থেকেই সাংবাদিক ক্রিস ব্যারেট ধারণা করছেন ক্রমেই গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। মঙ্গলবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই প্রতিনিধি তার প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানান।

universel cardiac hospital

মিয়ানমারের বিশাল একটি অংশ নিয়ন্ত্রণকারী তিনটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন জান্তাদের কয়েকদিনের রক্তক্ষয়ী আচরণে ফুঁসে উঠেছে।

জানাজায় গুলি চালানো, লাশ পুড়িয়ে ফেলা এমনকি শিশুদের উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকে ‘জনগণের সঙ্গে লড়াই’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংগঠনগুলো। আর কারণেই মনে হচ্ছে তারা সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে।

সামরিক জান্তা শুধু গুলি করে মানুষ হত্যা করছে এমন নয়, তারা একইসঙ্গে আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। এর ফলে ওইসব গ্রামের ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে। কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্রয় না দিয়ে পুশব্যাক করছে।

নিরুপায় এসব মানুষ দেশে ফিরে বাঙ্কার খুঁড়ে তাতে অবস্থান নিচ্ছেন। জনতার পাশে থেকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ওই তিনটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গ্রুপ।

অন্যদিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যবর্তী স্থানে কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু থাইল্যান্ড তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের খাবার নেই। পানি নেই।

ফলে এখন তাদের জন্যে একটাই পথ খোলা- সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ। চারদিকে এক গৃহযুদ্ধের দামামা। ক্রিস ব্যারেট আরও লিখেছেন, গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা হত্যাসহ দমনপীড়ন নৃশংসতা অব্যাহত রাখার ফলে দেশটির নিরীহ জনগণ এখন গৃহযুদ্ধের জড়িয়ে পড়ার হুমকিতে আছে।

মিয়ানমারের জাতিগত তিনটি সশস্ত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বিশাল অংশ। মঙ্গলবার তারা সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই তিনটি গ্রুপ হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি, আরাকান আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।

মিয়ানমারে চলমান প্রতিবাদ বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান আয়োজক সংগঠন জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিজের আগে দেশের বহু জাতিগত মিলিশিয়া সংগঠনকে নতুন এই শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। তার একদিন পরেই ওই তিনটি গ্রুপ এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

থাই সীমান্তের কাছে এখনো সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। সেখানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে সবচেয়ে সংগঠিত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গ্রুপ কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। সেনাবাহিনী সেখানে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার বিমান হামলা চালায়।

এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এই হামলার ফলে সীমান্তে সালউইন নদী এবং থাইল্যান্ডের মায়ে হোং সোন প্রদেশে আশ্রয় শিবিরের মধ্যবর্তী অবস্থানে ছিলেন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ।

তাদেরকে সোমবার রাতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা সোমবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা শরণার্থীদের গ্রহণ করতে পারেন।

তার ভাষায়, ‘তবে আমাদের ভূখণ্ডে দলে দলে নদীর স্রোতের মতো শরণার্থী চাই না। কিন্তু আমাদেরকে মানবাধিকারের দিকেও যত্ন নিতে হবে।’ তবে তার দেশের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মিয়ানমারের এসব মানুষকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেবেন না।

শেয়ার করুন