অনেক ক্ষেত্রেই ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ : দ্য ইকোনমিস্ট

মত ও পথ ডেস্ক

বাংলাদেশের অর্থনীতি
ফাইল ছবি

ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষের দরিদ্রতম অংশগুলোর একটি ছিল পূর্ববঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ ও দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গই পরিণত হয় পাকিস্তানের দরিদ্রতম অংশে (পূর্ব পাকিস্তান)।

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসাবে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। যুদ্ধে আরও দরিদ্র হয় দেশটি। পাকিস্তানিদের হাতে খুন হয় দেশের সেরা ও মেধাবী মানুষজন। কিন্তু এরপরও দেশটি বিভিন্ন খাতে অসামান্য উন্নতি করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এখন ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন যেমন অনুপ্রেরণাদায়ী, এর রাজনীতি ততটাই হতাশাজনক। এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে দ্য ইকোনমিস্ট।

universel cardiac hospital

এতে বলা হয়, তখন থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের জনপ্রতি আয় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার টানা ৪ বছর ৭ শতাংশের বেশি ছিল, যা পাকিস্তান, ভারত ও চীনের চেয়েও বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশিরা বর্তমানে শুধু আগের তুলনায় বেশি ধনীই নন, একইসঙ্গে তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে থাকে। আশির দশকে এমন শিশুর পরিমাণ ছিল মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বেড়েছে স্বাক্ষরতার হারও। কমেছে শিশু মৃত্যুর হার। প্রায় সবাই উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের বদলে টয়লেট ব্যবহার করেন। সব দিক থেকেই পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশ।

মুক্তিযুদ্ধ যতটাই বিপর্যয়কারী হোক না কেন, এটা কিছু দিক দিয়ে বাংলাদেশকে সফলতার পথে নিয়ে গেছে। দেশকে উদ্ধারে ফিরে এসেছিলেন অনেক প্রবাসী। ব্রিটেনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সস্তায় জেনেরিক ওষুধ ও গর্ভনিরোধক বিলি করতে দাতব্য সংস্থা স্থাপন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। লন্ডনে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়ে আরেকটি দাতব্য সংস্থা-ব্র্যাক খোলেন ফজলে হাসান আবেদ। সংস্থাটি ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দাতব্য সংস্থা ও এনজিওগুলোকে খুশি মনেই এসব কাজ করতে দিয়েছে তৎকালীন সরকার। আশির দশকে শিশুদের পোলিওর মতো রোগের টিকা দেওয়ার কর্মসূচির অর্ধেক সম্পন্ন করেছিল সরকার ও বাকি অর্ধেকের দায়িত্ব নিয়েছিল ব্র্যাক। ওই দশক শেষ হওয়ার আগে দেশটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হার ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছায়।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ পোশাক শিল্প নারীদের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছে। মজুরিসম্পন্ন কাজে নারীদের অংশগ্রহণ ৫০ বছর আগে ৩ শতাংশ ছিল। এখন তা ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ৪০ লাখ পোশাককর্মীর ৮০ শতাংশই নারী।

করোনাভাইরাস মহামারিতে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন লাখ লাখ মানুষ।

ব্র্যাকের প্রধান আসিফ সালেহ বলেন, জাতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার পরিমাণ মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে। কাজের সন্ধানে কেউ বিদেশ যেতে পারছে না। এতে ভবিষ্যতে দেশে রেমিটেন্স প্রবেশের হার কমার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

শেয়ার করুন