দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে সংক্রমণ মোকাবিলা সম্ভব নয়। জোর দিতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘিরে ব্যাপক কর্মতৎপরতার ওপর। সেক্ষেত্রে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২৯ মার্চ থেকে প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ৫ হাজারের বেশি রোগী। মাত্র ৪ দিনেই শনাক্ত হন রেকর্ড ২২ হাজারের বেশি। ফলে রোগীর চাপে ভেঙে পড়ার উপক্রম চিকিৎসাব্যবস্থাও। কান পাতলেই ভেসে আসছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি, আইসিইউ নিয়ে হাহাকার, আর নানা সংকটের কথা।
একজন ভুক্তভোগী জানান, কারো আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে না থাকলে কেউ বিষয়টা বুঝতে পারবে না। একটা আইসিইউর জন্য কত জায়গা গিয়েছি।
সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ছে দেশের প্রায় সব প্রান্তেই। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১০ শতাংশের বেশি শনাক্ত হচ্ছেন, এমন ৩১টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যার মধ্যে শীর্ষস্থানে আছেন যুক্তরাজ্য-প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার, শীর্ষ পাঁচে আছে সিলেট। এটি যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ভিন্ন কথা বলছে আইইডিসিআর।
অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, দেশে যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছে অথবা বাংলাদেশে নতুন কোনও স্ট্রেইন হয়েছে। এটা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় অস্ত্র টেস্টিং, ট্রেসিং, ট্রিটমেন্ট বা আইসোলেশন। যদিও বর্তমানে আগের তুলনায় বেড়েছে পরীক্ষার হার। মার্চে দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক মাসে রেকর্ড ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কৌশল আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার বিষয়টি থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিতই।
অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আরো বলেন, সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য আমাদের দরকার ট্রেসিং, করোনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা এক শতাংশ কন্ট্রাক ট্রেসিং হয় না। এটা সম্ভব না। মহামারিতে শতকরা শতভাগ কট্রাক ট্রেসিং সম্ভব না।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে কেবল ১৮ দফা নির্দেশনা নয়, মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।