দেশের পর্যটনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের দেশের তরুণরা এখন পর্যটন শিল্পে উদ্যোক্তা হিসেবে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। দেশের হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, পার্ক, পিকনিক স্পট, ট্যুর অপারেটর কোম্পানী, ট্রাভেল এজেন্সী ছাড়াও পর্যটনের উপখাত গুলোতে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। আমি অনেক আগেই বলেছিলাম, পর্যটনকে শক্তিশালী করতে হবে। পর্যটনকে যত শক্তিশালী করা যাবে সমাজব্যবস্থায় ততই পরিবর্তন আসবে।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকাল ০৪.০০টায় দেশের প্রথম ও একমাত্র পর্যটন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

universel cardiac hospital

রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. মোশাররফ হোসেন এবং জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে যেভাবে গবেষণা হওয়া দরকার ছিলো, সেটা হয়নি। অথচ পর্যটন শিল্পের প্রসার, বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিটিআরই)। প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর দিনে আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। আশা করি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন, উন্নয়ন এবং একটি পর্যটনবান্ধব জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, আমি এমন একটি জায়গা থেকে এসেছি, যেখানে প্রতিনিয়তই ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করি। তারপরও আমি আজ আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি শুধু এ কথাটি বলার জন্য- আসুন আমরা সকলে এই দেশটাকে একটি পর্যটনবান্ধব দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসি।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই জিডিপির বড় একটা অংশ আসে পর্যটন থেকে। অনেক ছোট ছোট বিষয় আছে, যেমন পাহাড়ের চূড়ায় একটা পাথর আছে- সেটাও পর্যটনের জন্য একটি আকর্ষণীয় উপাদান হতে পারে শুধু সঠিক মার্কেটিংয়ের কারণে। কিন্তু আমাদের দেশে এসব উদ্যোগের খুবই অভাব রয়েছে। এতদিন পর্যন্ত তো পর্যটন ছিল না বললেই চলে। আমি এখন দেখছি, পর্যটন মনে হয় একটা অবস্থানে আসার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, আমার দীর্ঘদিন সরকারের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেকোনো এন্টরপ্রেনরশীপের জন্য গভর্মেন্টের চেয়ে প্রাইভেট কাজের গুরুত্ব বেশি। আমি একসময় অনেকটা সোসালিষ্ট ভাবধারার লোক ছিলাম। এখনও পুরোপুরি সোসালিষ্ট ভাবধারা ত্যাগ করিনি। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয়েছে ব্যক্তিউদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো যেসমস্ত দেশে এখনো ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশন হয়নি, সেখানে সোসালিজম খুবই কঠিন ব্যপার। আর যেটা মার্ক্স বলেছেন সে ধরনের কোনো সমাজতন্ত্র এখন কোনো দেশেই নেই। তবে আমি মনে করি, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মিশ্রণে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন এবং সেটি সম্ভব।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি গরীব দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন কোনো আইন নেই, যেটা তিনি করে যাননি। আমরা যে ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয় অর্জন করেছি সে আইনটিও বঙ্গবন্ধু নিজে করে গিয়েছিলেন। এটি পাকিস্তান সরকারও করতে পারেনি। আজকে বর্ডার এলাকার ছিটমহলগুলোর যে হস্তান্তর হয়েছে সে আইনটিও বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের সমাজকে কিন্তু পিছন দিকে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা চলছে। এই প্রবণতাকে মোকাবেলা করে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে পর্যটন বিকাশের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, আমি বলব না, আপনার সমাজকে আপনি ইউরোপীয় সমাজে রুপান্তর করেন। আমি বলব, আপনার সমাজকে আপনি খাঁটি বাংলাদেশের সমাজ করেন। যেন বাঙালি,গারো, হাজং, সাঁওতাল সবাই মিলে আমরা একটা চমৎকার সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। যার মাধ্যমে সংরক্ষিত হবে আমাদের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য-ইতিহাস।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, পবিত্র কোরআন শরীফেও ট্যুরিজমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- তোমরা সফর কর। তোমরা দেশ-বিদেশ ঘুরে দেখো। তাহলে তোমরা জানতে পারবে কী হচ্ছে পৃথিবীতে। মোল্লা সাহেবরা এটি জানলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তারা তা জানেন না। আন্তর্জাতিক ইসলামিক ট্যুরিজমের উপর ঢাকায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আমি বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম বিদেশি পর্যটকদের জন্য (মুসলিম-নন মুসলিম) একটি আলাদা জোন করে দেওয়ার জন্য। সৌদিরা কিংবা টার্কিশরা যখন বাহিরে যায় তার কী ধরনের ট্যুরিজম চায়, সেটা আমি জানি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই জাতীয় পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণের জন্য দেশি-বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যটন স্পটের উন্নয়নে নানা প্রকল্পবাস্তবায়ন করছে সরকার। জাতীয় পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্প নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হবে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। 

বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ও মাই টিভি’র প্রযোজক (অনুষ্ঠান) কাজী রহিম শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন, উন্নয়ন এবং একটি পর্যটনবান্ধব জাতি গঠন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)। এ প্রতিষ্ঠান পর্যটন বিষয়ক গবেষণায় বহুবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মৌলিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও পর্যটন মেলার আয়োজন, পর্যটন বিষয়ক জার্ণাল প্রকাশ, বই, লিফলেট, পোষ্টার ও দিনপঞ্জি প্রকাশ, পর্যটন বিষয়ক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, কাহিনী চিত্র ও টেলিফিল্ম নির্মাণ, পর্যটন পদক প্রদান, ট্রাভেল ও ট্যুরিজম বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও মেলায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ও মাই টিভি’র প্রযোজক (অনুষ্ঠান) কাজী রহিম শাহরিয়ার–এর সভাপতিত্বে এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর প্রথম সহ-সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন (বিটিইএ)-এর চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর ও ইন্টারন্যাশনাল কালিনারি ইনস্টিটিউট (আইসিআই)-এর পরিচালক (ট্রেনিং) জাহাঙ্গির আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আবু রায়হান সরকার।

ফিতা ও কেক কেটে বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)-এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, এমপি। এরপর অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট, নব্বই দশকের অন্যতম কবি ও মাই টিভি’র প্রযোজক (অনুষ্ঠান) কাজী রহিম শাহরিয়ার-এর লেখা পর্যটন বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলা কবিতায় ভ্রমণ ও পর্যটন’ সহ চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।                       

শেয়ার করুন