জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারে প্রতিরোধ আন্দোলন
ছবি : ইন্টারনেট

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দমনে শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশটির তিন শহরে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৫০ ছাড়াল।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনে জান্তা সরকারের সমালোচনা করায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমারের তরুণ-যুবারা। সেনাদের অত্যাচারের পালটা জবাব দিতে গ্রামবাসী অস্ত্র বানাচ্ছেন ঘরে বসেই। জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।

খবর মিয়ানমার নাও, ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার ও দ্য ইরাবতী। মিয়ানমার নিউজের খবরে জানানো হয়, মনিওয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হন। বাগো শহরে আরও একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। থাটন শহরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একজনকে।

মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ ১৮ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে। তাদের মধ্যে সামাজিক গণমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দুজন সাংবাদিক রয়েছেন। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে-এমন আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

হিংস থাবার বিপরীতে ফুঁসে উঠেছে গণতন্ত্রকামীরা। এবার তারা ‘শেষ যুদ্ধে’ নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গণতন্ত্র তারা ফিরিয়ে আনবেনই। কাচিনের ইনডিপেনডেন্স আর্মিতে যোগ দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মিয়ানমারের তরুণ-যুবারা। লক্ষ্য, ক্ষমতাসীন সেনাদল তাতমাদাওয়ের সঙ্গে যুদ্ধ।

এমনই এক যুবকের সঙ্গে কথা বলে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের প্রতিবেদক। চলমান এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেই কাচিনের এই যুবক মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ‘বিপ্লবই হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।’

জাউ তু (ছদ্মনাম) নামের ওই যুবক বাবা-মাকে বন্ধুর বাড়ি বাড়াতে যাচ্ছে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ১৩ মার্চ। পরদিনই ২৩ বছরের ওই যুবক কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মিতে নাম লেখান। তিনি নিয়মিত প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।

এমনকি, তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিনই কেউ না কেউ এসে নাম লেখাচ্ছেন এখানে। তিনি কেন এ দলে নাম লেখালেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাউ ফ্রন্টিয়ারকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে জান্তাবাহিনীর সহিংস, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আমি বিরক্ত। সামরিক জান্তাদের উৎখাত করবই।’

চীন সীমান্তবর্তী এলাকা কাচিন। খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এ এলাকার স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সাল থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছে কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি। কিন্তু, সম্প্রতি মিয়ানমারের চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে তারা গণতন্ত্রকামীদের পক্ষে যুদ্ধ করে তাতমাদাওকে পরাস্থ করার ঘোষণা দিয়েছে।

জাউ বলেন, ‘আমি যুদ্ধে নেমেছি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য। আমার মতো অনেক লোকই মনস্থির করেছেন-এটাই আমাদের শেষ যুদ্ধ।’ এই যুবক আরও জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মিতে (কেআইএ) যোগ দেওয়াদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগই নারী। এই নারীদেরই একজন নাও নাও।

তিনি বিশ্বজুড়ে চলমান মহামারি কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ইয়াঙ্গুনে। ওই চাকরি ছেড়ে চলে এসেছেন এখানে। বললেন, ‘কিন্তু আমার কাছে এখন স্বাধীনতাটাই মুখ্য হয়ে পড়েছে। পরাধীনতা (সেনাশাসন) থেকে মুক্তি চাই।’

মিয়াতকিয়ানা থেকে এখানে আসা যুবক কুন জা বললেন, ‘বিপ্লব শুরু করার এটাই আমাদের সেরা সুযোগ। আমরা একত্রেই যুদ্ধ করব।’

২৬ বছরের আরেক যুবক মিতকিয়ানায় ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। এখানে যোগ দেওয়ার কারণ হিসাবে বললেন, ‘আমি বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করতে চাই, এখানে বন্দুক পাওয়া যাবে। যদিও এটা কঠিন। বাবা-মায়ের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এ কাজ আমি করব।’

এখানে যোগ দেওয়াদের সবাই নির্ভীক। সেং নু প্যান জানেন অস্ত্র ছাড়া তাতমাদাওর সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমি স্বৈরতন্ত্রকে ভয় করি, গৃহযুদ্ধকে নয়।’

হাতে বানানো অস্ত্র তৈরি হচ্ছে ঘরে ঘরে জান্তাদের আক্রমণ প্রতিহত করে উলটো আক্রমণের প্রস্তুতি চলছে মিয়ানমারের গ্রামগুলোতে। শুক্রবার সেগাইং অঞ্চলের ইনমাবিন গ্রামে জান্তাবাহিনীর আক্রমণে বেশ কজন আহত হয়েছিল। এ অবস্থায়ই কমপক্ষে ছয়জনকে ধরে নিয়ে যায় জান্তারা।

এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে সেনাদের কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়। জানিয়েছে দ্য ইরাবতী। জান্তাবাহিনীর শঙ্কার মধ্যেই ছিল-ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীগুলো যেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেও হতে পারে। আর এ শঙ্কা থেকেই তারা এই দলগুলোর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিও করেছিল। কিন্তু না।

তাদের সেই ধূর্ততা কাজে লাগেনি। মিয়ানমারে ব্যাপক সংঘাত আসন্ন। কারণ, শনিবার দেশটির ১০ প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী দেশটির চলমান অভ্যুত্থানবিরোধী অদম্য লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

রক্তাক্ত মিয়ানমারে প্রায় দু’ডজন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, যারা বেশির ভাগ সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের মধ্যে ১০টি প্রধান দল মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মিলিত হয়েছিল শনিবার।

শেয়ার করুন