সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল প্রসঙ্গে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হেফাজত

সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হেফাজত নেতা মামুনুল হক
সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হেফাজত নেতা মামুনুল হক। ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে রোববার বিকেলে হঠাৎ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়েসহ প্রাসঙ্গিক অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় হেফাজত।

যদিও কোনো তথ্য-উপাত্ত হাজির না করেই মামুনুলের দ্বিতীয় বিয়ের বৈধতা প্রমাণে নানা কথা বলা হয়। তবে বিয়ের সাক্ষী, কাজির নাম ও কোথায় বিয়ে পড়ানো হয়েছিল এমন প্রশ্নে বলা হয়- ‘বিয়ের বিষয়টি মামনুল হকের ব্যক্তিগত ইস্যু। এ বিষয়ে মামুনুল নিজেই ফেসবুকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ওই ব্যাখ্যার পর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এর বেশি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।’

universel cardiac hospital

সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন না। হেফাজতের পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুহা. ফয়সাল।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের এই নেতা বলেন, মামুনুল হক কসম করে বলেছেন, দুই বছর আগে ওই নারীকে বিয়ে করেছেন। তাকে নিয়ে শনিবার সোনারগাঁ যান হুজুর। ধরে নিলাম, প্রশাসন তাকে সন্দেহ করেছে। এরপর সেখানে একজন পর্দানশীল নারীকে যেভাবে একের পর এক সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে হেনস্তা করেছে- এটা আল্লাহ বরদাশত করবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা তাদের নাজেহাল করেছে।

মুহা. ফয়সাল আরও বলেন, আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না। প্রশাসনের মধ্যে মানবতাবোধ জাগ্রত করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ওই নেতার বক্তব্যের মাঝে মাঝে সেখানে উপস্থিত সংগঠনটির অন্য নেতাকর্মীরা ‘ঠিক ঠিক’ বলে আওয়াজ তোলেন।

মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় রয়্যাল রিসোর্টে অবস্থান নেন। এ খবরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে আটক করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সন্ধ্যায় হেফাজতের কয়েকশ কর্মী-সমর্থক রয়্যাল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুর করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙচুর করে। শনিবার রাতে মামুনুলের একাধিক টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে জনৈক ‘শহীদ ভাইয়ের ওয়াইফ’ হিসেবে উল্লেখ করে স্ত্রীকে পরামর্শ দেন ‘কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবা আমি সব জানি’। শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত হেফাজত নেতা মামনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী প্রসঙ্গ সারাদেশেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্ব

নারায়ণগঞ্জে একজন নারীকে হেনস্তা করা হয়েছে- এটা দাবি করছেন আপনারা (হেফাজত)। আমরা দেখছি হেফাজতের অধিকাংশ কর্মসূচিতে নারী সংবাদকর্মীরা টার্গেট হন। তাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। এমন প্রশ্নে হেফাজতের ওই নেতা বলেন, আমরা নারীর অধিকারে বিশ্বাসী, নারীর মর্যাদায় বিশ্বাসী। মর্যাদার দিক থেকে একজন নারীর অবস্থান কোনো অংশে পুরুষের চেয়ে কম নয়।

হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েকটি কলরেকর্ড ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে কী বলতে হবে, তা শিখিয়ে দিচ্ছেন। এই কণ্ঠ কি মামনুলের? যদি এই কণ্ঠ তার হয়, তাহলে কীভাবে মিথ্যা বলার এমন পরামর্শ দিলেন- এমন প্রশ্নের পর হেফাজতের অন্য নেতারা হট্টগোল শুরু করেন। কেউ কেউ ‘ঠিক ঠিক’ চিৎকার করেন।

তখন একজন সংবাদকর্মী বলেন, আপনারা কী সংবাদ সম্মেলন করতে আসছেন, নাকি ঠিক-বেঠিকের আলোচনা করতে এসেছেন। এটা আগে নিশ্চিত করেন। আপনাদের লোকজনকে সামলান। কখনও আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আপনাদের লোকজনই থাকে না।

এরপর মামুনুলের ফোনালাপের ব্যাপারে মুহা. ফয়সাল বলেন, যারা কাটছাঁট করে ফোনালাপ প্রচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। এসব শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এক সংবাদকর্মীর প্রশ্ন ছিল- ‘ধরে নিলাম ফোনালাপ ফাঁস করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আপনারা স্পষ্ট করেন, মামুনুল হক তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে এমন কথা বলেছেন কিনা। কারণ আমাদের কাছে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে কলরেকর্ড এসেছে। এ ছাড়া কবে কোথায় মামুনুল হক দ্বিতীয় বিয়ে করলেন? এই বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে কিনা।

এমন প্রশ্নের পর হেফাজত নেতা মুহা. ফয়সাল বলেন, কবে কোথায় বিয়ে করেছেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা হেফাজতের পক্ষ থেকে শুধু কমন বিষয় নিয়ে কথা বলছি।

হেফাজতের পক্ষ থেকে মামুনুলের ঘটনা নিয়ে কোনো তদন্ত করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর আসেনি। শুধু বললেন, ‘এর বেশি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।’

হেফাজতের আহত নেতাকর্মীদের পরিবারের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই কীভাবে মামুনুল হক বিলাসবহুল রিসোর্টে মানসিক প্রশান্তির জন্য গেলেন- এমন প্রশ্নেরও পরিষ্কার উত্তর দেয়নি হেফাজত। পরে তাড়াহুড়া করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচি শেষ করে হেফাজত।

শেয়ার করুন