ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় আরও ১৩টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৪ হাজার ৩২০ জনকে। গত সোমবার রাত থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত সদর মডেল থানায় এসব মামলা করা হয়।
এ পর্যন্ত সেখানকার সহিংসতার ঘটনায় মোট ৪৫টি মামলা হয়। এতে আসামির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে ‘মাদ্রাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। এতে ১৩ জন নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে হেফাজতের দাবি, নিহতের সংখ্যা ১৫।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনায় ৪৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১১টি মামলায় ২০৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি সবাই ‘অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী’। কোনো কোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়।
৪৫টি মামলার মধ্যে সদর থানায় ৪০টি, আশুগঞ্জ থানায় দুটি, সরাইল থানায় দুটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আগুন দেয়ার ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম বলেন, সোমবার রাত থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত সদর থানায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সদর থানায় ৪০টি মামলা হয়েছে।
সদর থানা পুলিশ জানায়, সোমবার রাত থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়। ২৭ মার্চ বিকালে সাড়ে ৫টার দিকে জেলা শহরের টি এ রোড এলাকায় মাদ্রাসাছাত্র ও ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় টি এ রোড এলাকার মান্নান ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় থাকা যমুনা টিভির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ৪০-৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়।
২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল পালনের সময় বেলা ১১টার দিকে শহরের মুন্সেফপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের বাসভবনে হামলা ও আগুনের ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা, একই দিন সকালে বাগানবাড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগের এই নেতার শ্বশুরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
এ ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়। একই দিন বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে জেলা শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
একই দিন জেলা ক্রীড়া সংস্থা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ২০০ জন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিরাসার এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জন, উত্তর মৌড়াইল এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৪৬ জনকে এজহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জন, দুপুর ১২টার দিকে সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গণে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরাতন কাচারি পুকুরপাড় এলাকায় বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূইয়ার ব্যক্তিগত ল চেম্বার ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় এজহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারপাড়া এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে হামলা ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪০০, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আয়োজিত জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন মেলায় হামলা ও মেলার স্টলগুলো পোড়ানোর ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪০০ জন এবং জেলা পরিষদের ভেতরে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু একাডেমিতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।