করোনা: উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ

ডেস্ক রিপোর্ট

দ. আফ্রিকান প্রজাতির করোনা
ছবি : ইন্টারনেট

বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি। সংস্থাটি বলছে, দেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। এটি বেশ সংক্রামক এবং এর তীব্রতাও ভয়াবহ। এতে উদ্বেগ জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নতুন এই ধরনটি যেহেতু দ্রুত ছড়ায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়বে, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

universel cardiac hospital

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর’বি বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে জানায় যে, বাংলাদেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১% দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পুরোপুরি কার্যকর নয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিকল্প অন্য টিকা আনার ব্যাপারে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে এখন ব্রিটেনের তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার যে টিকা দেয়া হচ্ছে সেটারই সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করার দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য টিকাগুলো আনার ব্যাপারে খোঁজ খবর চলছে বলে জানা গেছে।

সব ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসও প্রতিনিয়ত তার ধরন পরিবর্তন করছে। এই ক্ষুদ্র জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যম ভাইরাসটি নতুন কপি তৈরি করে যা আরও দ্রুত ও তীব্রভাবে ছড়াতে পারে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

এরইমধ্যে এই ভাইরাসটির কয়েক হাজার ধরন তৈরি হলেও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট এবং ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে চলতি বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে।

মার্চের চতুর্থ সপ্তাহেই দেখা যায়, দেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। আইসিডিডিআর’বির প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই ভ্যারিয়েন্টটি অতি সংক্রমণশীল অর্থাৎ আগের চাইতে দ্রুত ছড়ায়। রোগের তীব্রতা বেশি হওয়ায় মৃত্যুর হারও বেশি।

এ কারণে দ্রুত এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা না গেলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে। সেইসঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়বে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী।

এই ধরনটি বয়স্ক এবং আগে থেকেই অসুস্থদের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। নতুন ধরনটি যেহেতু সহজেই এবং দ্রুত ছড়ায় তাই এর বিরুদ্ধে টিকা যথেষ্ট কার্যকর নাও হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে লেলিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করোনাভাইরাসের যে টিকা দেয়া হচ্ছে, সেটি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে আংশিক কার্যকরী, পুরোপুরি নয়।

ফলে বাংলাদেশ সরকার টিকা দেয়ার মাধ্যমে মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলার যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মনে করেন, যা বাংলাদেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

অন্যদিকে, কেউ যদি আগে একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার শরীরে যে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সেটা সাউথ আফ্রিকান ধরনের ক্ষেত্রে কাজ করে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এছাড়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পরও শরীরে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে সেটাও নতুন এই ধরনের কাছে হার মানতে পারে।’

অর্থাৎ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার পুরো ডোজ টিকা নেয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন এই ধরনে টিকা গ্রহীতারা আক্রান্ত হতে পারেন।

এক কথায় দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধরনটিকে মারাত্মক আখ্যা দিয়ে একে বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে উল্লেখ করেছেন বেনজীর আহমেদ।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন যে টিকাটি আছে সেটারই সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করার দিকে তারা মনোযোগ দিচ্ছেন। টিকা নিলেও করোনাভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা জানান তিনি।

নাসিমা সুলতানা বলেন, ভাইরাস বা টিকার বিষয়গুলো এখনো গবেষণাধীন। আর কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকারিতার নিশ্চয়তা দেয় না। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও তেমনই। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের হাতে এখন যে টিকা আছে,আমরা সেটা নিয়েই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো।

করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটির প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধের ওপরেই বেশি জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, টানা তিন সপ্তাহ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর লকডাউন ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উপায় নেই।

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ মাস্ক পরা, তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ভয়াবহ এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর পথ। এছাড়া, বাংলাদেশে শনাক্ত ভাইরাসের জেনম সিকোয়েন্স বা জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি কতটা ছড়িয়েছে সেটা পুনরায় নিশ্চিত হয়ে টিকা দেয়ার কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন