হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের এক নেতাকে পুলিশের সামনে হেনস্তার ঘটনায় ধর্মপাশা থানার দুই পুলিশ অফিসারকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার এবং জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্থা করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে ধর্মপাশা উপজেলা আ.লীগের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিছ বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। আলম অতীতে আ.লীগের রাজনীতি করেনি। এ ঘটনার জন্য জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ দায়ী।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে হেনস্তার শিকার হন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। আফজালের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। সে ঢাবিতে সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। কয়েক ঘণ্টা পর পোস্টটি ’অনলি মি’ করে রাখনে। স্থানীয় কিছু যুবক ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় আফজাল নিজ গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে গেলে জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদ (২৫) কিছু মানুষকে নিয়ে আফজালের কাছে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। তখন শিক্ষার্থী আফজাল সবাইকে বলেন, হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
এনিয়ে শিক্ষার্থী আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে হঠাৎ কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে মুজাহিদ আফজালের উপর চড়াও হয়। পরে মুজাহিদের পক্ষের লোকজন শিক্ষার্থী আফজালকে বাজারে থাকা ইউনিয়ন আ.লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটকে রাখেন।
ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তারা ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ বলেন, হেফাজতকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা তখন ইসলাম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা আফজালের দাবি, ধর্মপাশা থানার ওসির নির্দেশে তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিচয় পেয়ে মাঝপথেই পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। থানায় বসে তিনি রাতে পুলিশ সুপারের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই রেখে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে হয়রানী করার ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে অবগত করার পরপরই মঙ্গলবার রাতেই ধর্মপাশা থানার অভিযুক্ত থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এসআই জহিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি ও এএসআই আনোয়ার ছাত্রলীগ নেতার হাতে হাতকড়া পড়ায়নি। ওসির নির্দেশে সিভিল পোশাকে থাকা একজন এএসআই হাতকড়া পড়িয়েছিল।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।