রাজধানীতে এসএসসির ফরম পূরণে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরম পূরণ
ফরম পূরণ। ফাইল ছবি

রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ফরম পূরণে উন্নয়ন ফি, চলতি বছরের টিউশন ফি, ল্যাব চার্জ, নানা ধরনের বিল ও ফি আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি অর্থ পরিশোধ না করলে ফরম পূরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। আবার বাড়তি অর্থ নেয়ার রসিদও দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক অভিভাবক।

২০২১ সালের এসএসসির পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু করতে গত ২১ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা বোর্ড থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সে অনুযায়ী ফরম পূরণ শুরু হয় গত ১ এপ্রিল। আর ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিলম্ব ফি ছাড়া ফরম পূরণের সুযোগ থাকলেও চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে বিলম্ব ফি ছাড়া ফরম পূরণের সময় আরও বাড়ানো হবে। নতুন সময়সূচির পরও বিলম্ব ফি ১০০ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।

universel cardiac hospital

শিক্ষা বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী, এ বছর প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসির ফরম পূরণ বাবদ সর্বোচ্চ এক হাজার ৯৭০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৫০ টাকা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৫০ টাকা নিতে বলা হয়েছে।

এসএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিষয়প্রতি ১০০ টাকা, ব্যবহারিক ফি বাবদ পত্রপ্রতি ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ফি বাবদ ৩৫ টাকা, মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা, বয়েজ স্কাউট ও গার্লস গাইড ফি বাবদ ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ পাঁচ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা অনিয়মিত ফি এবং জিপিএ উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তি ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ফরম পূরণ করা হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার আজিমপুরের রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ হাজার, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১০ থেকে ২০ টাকা, ডেমরা সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজেও এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে উন্নয়ন ফি, ল্যাব ফি, প্রতিষ্ঠানের বিল আদায় না করতে বলা হলেও ছেলেমেয়েদের ফরম পূরণের সঙ্গে সব ফি আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি অর্থ পরিশোধ করা না হলে ফরম পূরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে তাদের শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ নিলেও বাড়তি অর্থের রসিদ দেয়া হচ্ছে না। চাইলে ‘পরে দেয়া হবে’ বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রহিমা আফরোজ বলেন, ‘নিজ অর্থায়নে আমরা এ প্রতিষ্ঠানটিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখানকার কেউ সরকারি অর্থ বা এমপিও সুবিধা পান না বলে শিক্ষকদের বেতন আদায় করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ সকল ব্যয় চালাতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে চাপ দেইনি, সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি, সকলে সেটি মেনে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন। আমরা নিয়মিত অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষা বোর্ড থেকে ডিসেম্বরের বেতন নিতে বললেও আমরা নিয়মিত অনলাইনে তাদের ক্লাস নেয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত বেতন আদায় করা হচ্ছে বলে ফরম পূরণের অর্থ বেশি মনে হচ্ছে।’

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় করে এসএসসির ফরম পূরণ করা হচ্ছে। এ জন্য অর্থের পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে। তবে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক এ বাবদ বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে না।’

ডেমরা সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান মোল্লা দাবি করেন, অতিরিক্ত অর্থ নয়, ব্যাংক ফি ও কাগজের দাম বাবদ ৫০ থেকে ১০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৩৫০ জন ফরম পূরণ করেছে। যদি কেউ এ অর্থ দাবি করে, তবে অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা ফেরত নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু। তিনি বলেন, ‘আমি প্রিন্সিপালকে যে নির্দেশনা দেই তিনি তাই বাস্তবায়ন করে থাকেন। এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমি দেইনি। কেউ অভিযোগ দিলে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।’

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ ফোন করে অভিযোগ দিচ্ছেন, তবে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ দেননি। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত অর্থের বেশি যা আদায় করা হবে তা পাইপাই করে ফেরত দিতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাবে শিক্ষা বোর্ড থেকে তদন্ত টিম পাঠানো হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের সব ধরনের অনুমোদন বাতিল করা হবে।’

শেয়ার করুন