হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নতুন আরেক বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। নতুন এই বান্ধবীর পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। এই নারীকে এতদিন মামুনুলের প্রথম স্ত্রী ধারণা করলেও গত দুইদিন আগে বেরিয়ে এসেছে নতুন এক তথ্য।
এতে রীতিমতো হতভম্ব গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে মামুনুলের ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে এই নারীর সম্পর্কে যাচাই-বাছাই শেষে গোয়েন্দারা আরও নিশ্চিত হয়। তবে মামুনুল হকের আগের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না হওয়ার কারণে এই জান্নাতের পরিচয় নিশ্চিত করতে দারুণ বেগ পেতে হয়। তবে মামুনুল এবং জান্নাতের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বর্তমানে গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে।
জানা গেছে, জান্নাতুল ফেরদৌসের নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড অনুযায়ী তার বাবার নাম জামাল। মা আকলিমা বেগম। ঠিকানা- গাজীপুর কাপাসিয়ার বানার হাওলা’য়। জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৯০।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের জান্নাতুল বায়াত মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন মামুনুলের এই বান্ধবী। মাদ্রাসার পাশেই একটি বাসা ভাড়া করে থাকেন। এই বাসাতেই মাওলানা মামুনুল হক মাঝে-মধ্যেই যাতায়াত করতেন। নিয়মিত যোগাযোগও ছিল।
পাশাপাশি একান্তে সময় কাটানোর অনেক উপকরণও হাতে পেয়েছে গোয়েন্দারা। জান্নাতুল বায়াত মহিলা মাদ্রাসার প্রধান উপদেষ্টা হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক।
৪৯ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল-জান্নাতের কথোপকথন :
মামুনুল : হ্যালো আমি আসছি।
জান্নাত : চলে আসছেন? গেট খোলা আছে।
মামুনুল : গেট খুলে আমাকে রিসিভ করার ব্যবস্থা কর।
জান্নাত : হ্যাঁ।
মামুনুল : আসতেছি কিন্তু…
জান্নাত : আচ্ছা।
মামুনুল : কেউ আছে নাকি দেখ আগে।
বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল-জান্নাতের কথোপকথন :
মামুনুল : চলে আসছি। বুঝছ…
জান্নাত : ঠিক আছে।
শুনছি।
মামুনুল : চোরের মতো কথা কও কিল্লাইগা। জোরে জোরে কথা কইতে পার না?
জান্নাত : জোরে কেন কমু। বেশি করে কমু। সমস্যা কী?
মামুনুল : হে হে হে…. গুডনাইট। ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া কর। বুঝছ।
জান্নাত : কী হইছে?
মামুনুল : ফ্রেশ হইয়া নামাজ-টামাজ পড়বা না?
জান্নাত : হুঁ।
মামুনুল : নামাজ পড় আর আমার জন্য দোয়া কর।
জান্নাত : বাসায় পৌঁছে একটা মেসেজ দিয়েন।
মামুনুল : বাসায় পৌঁছে মেসেজ দেওয়ার কী আছে? বাসায় তো পৌঁছায়া গেছি।
জান্নাত : কী হইছে।
মামুনুল : বাসা তো এইখানে।
জান্নাত : আচ্ছা… যান।
মামুনুল : আচ্ছা।
জান্নাত : আসসালামু আলাইকুম।
৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল-জান্নাত যা বলেছিলেন :
জান্নাত : আসসালামু আলাইকুম।
মামুনুল : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ।
জান্নাত : দেখছেন।
মামুনুল : না।
জান্নাত : তাহলে আগে প্ল্যানটা বলেন।
মামুনুল : পিলান-টিলান আর বলতে পারুম না। হাতে সময় বের করতে পারি কি না। পারলে তখন কী করব সেটা বল।
জান্নাত : আমি বলি শোনেন। আপা আছে না।
মামুনুল : হ্যাঁ।
জান্নাত : আপার ইবনে সিনায় কিছু টেস্ট আছে।
মামুনুল : হ্যাঁ।
জান্নাত : চাইছিলাম আজকে টেস্টগুলো করাতি দেওয়ার জন্য।
মামুনুল : হ্যাঁ।
জান্নাত : আমি বের হলেও তো এদিকে কাজগুলো পারব না। আর আপার টেস্টের জন্য বের হলে সাড়ে ৩টার পরে বের হব।
মামুনুল : সাড়ে ৩টায় বের হও। আমার প্রোগ্রাম আরও পরে। তারপর কী করবা। উনি কী করবে তুমি কী করবা।
জান্নাত : বাসায় নিয়া আমু। আমারে জিগায়সে এত দেরি হলো কিল্লায়গা। আমি বলেছি ডাক্তারের সিরিয়াল পাইতেছিলাম না। সিরিয়াল পাইতে দেরি হইছে। পরে আমি বলছি আর সমস্যা নাই। আমি বাসায় একলা থাকতে পারব। থাকতে তো পারব এটা আমিও জানি। সমস্যা কী? থাকব। কিন্তু আমি যদি রাতে ব্যাক করি? রাতে তো মনে হয় ব্যাক করা হবে না। আসলে সকালে। বুঝছ।
মামুনুল : সে রকমই তো। এখন কী করবা বল। ঝামেলা হয়ে গেল।
জান্নাত : আমারে নিয়ে না আপনার কই যাওয়ার কথা।
মামুনুল : কোথায়, বল।
জান্নাত : হুঁ।
মামুনুল : কই যাওয়ার কথা।
জান্নাত : সমুদ্রে যাওয়ার কথা।
মামুনুল : না। সেটা তো আলাদা, আলাদা প্রোগ্রাম করতে হবে। সেটা তো আরও কয়েক দিন পরে করব ইনশা আল্লাহ।
জান্নাত : আচ্ছা। আপনি সময় পেলে করবেন। আমি আপারে টেস্ট করায়ে, হয়তো টেস্ট শেষ হতে রাত ৮টা/৯টা বাইজে যাইতে পারে।
মামুনুল : ওরে বাপরে বাপ।
জান্নাত : আল্ট্রা করে যে উনি বসে ৬টায়। ও তো একলা আসতে পারব না এটা কয়ে লাভ না। বাসা পর্যন্ত। আজকে মনে হয় না হইব।
মামুনুল : আচ্ছা ঠিক আছে।
জান্নাত : আর যদি মনে করেন খুব বেশি সমস্যা তাহলে আজকে না কালকে গেলাম। কালকে শনিবার। এখন আপনার ওপর নির্ভর। আপনি তো সময় বের করা সো টাপ।
মামুনুল : সারা দিন তো কাজ-কাম। কোনো কিছু সহজ না।
জান্নাত : এহন আপনার ইচ্ছা। আমারে যা কইবেন তাই। আমার অত শখ নাই।
মামুনুল : আচ্ছা তুমি তোমার মতো কাজ চালাইতে থাকো। টেস্ট-মেস্ট করাও তারপর দেখি।
জান্নাত : আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি সাড়ে ৩টার পর আপারে নিয়ে বেরুব।
মামুনুল : ঠিক আছে।
জান্নাত : আচ্ছা, আসসালামু আলাইকুম।
মামুনুল : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ।
৩ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল-জান্নাত :
জান্নাত : আসসালামু আলাইকুম।
মামুনুল : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। কী অবস্থা। ঝামেলা নাকি?
জান্নাত : না। বলেন।
মামুনুল : কথা এমনে কইতাছ ক্যান। মনে হয় যে ঘুমায় ঘুমায় কথা কইতাছ।
জান্নাত : ঘুমায় ঘুমায় কথা বলতাছি না। ক্লাসে আছি। অফিসে বসেন। আমি আসতাছি।
মামুনুল : কেন আমি অফিসে বসব। আমি অফিসে বসব না। আমি এখন কথা বলব এবং যা ইচ্ছা তাই বলব।
জান্নাত : বাড়াবাড়ি করতাছেন যে…
মামুনুল : কী বাড়াবাড়ি কী করছি আবার। কথা বলা মানুষের বাকস্বাধীনতা।
জান্নাত : আপনি তো আমার বাকস্বাধীনতা হরণ করছেন। পোলাপাইনের সামনে অনেক কিছু বলতে পারছি না।
মামুনুল : হা হা হা।
জান্নাত : মজা নিতাছেন।
মামুনুল : এটা ঠিক না, এটা ঠিক না। একজনকে লাইনে রাইখা আরেকজনের সঙ্গে কথা বলা। না এটা ভদ্রতা পরিপন্থী কাজ। ওনারা থাকলে এখন তো আর যাওয়া যাইবে না।
জান্নাত : এক ঝামেলার মধ্যে এত রস আসে কোত্থেকে।
মামুনুল : আজকেই বিকালে, সন্ধ্যায় আসতাছি।
জান্নাত : আরে নাঃ।
মামুনুল : আচ্ছা ঠিক আছে তুমি জানাও।
ঝর্ণার সন্ধান পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক টিম সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে ঝর্ণার বড় ছেলে আবদুর রহমান একটি গণমাধ্যমের কাছে তিনটি ডায়েরি নিয়ে কথা বলার পর থেকেই ঝর্ণার ফোন নম্বরও বন্ধ পাচ্ছেন তার সন্তানেরা। উদ্বিগ্নতায় কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। অন্যদিকে, বর্তমানে ঝর্ণার তিনটি ডায়েরিই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হস্তগত হয়েছে। এ ব্যাপারে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে ডিবি পুলিশ। এ ব্যাপারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসলে তিনটি ডায়েরিসহ আরও কিছু ডকুমেন্টস আমাদের কাছে এসেছে। এগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তবে তদন্তের আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
গত ৩ এপ্রিল এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে অবকাশ যাপনের সময় আটক হন হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হক। সেখানে তিনি দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে ঘটনার পর প্রায় এক ডজন অডিও-ভিডিও ফাঁস হয়েছে।
জানা গেছে, রয়েল রিসোর্ট কান্ডের পর থেকে ধানমন্ডি এলাকার ২৩/৩, নর্থ সার্কুলার রোডে থাকলেও বর্তমানে ঝর্ণার কোনো হদিস পাচ্ছেন না তার পরিবারের লোকজন। আগে সন্তানদের সঙ্গে কথা বললেও গত তিন-চার দিন ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন না ঝর্ণা। তবে কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় বসবাস করছেন বলে একটি খবর এলেও সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ডায়েরিতে যা লিখেছেন ঝর্ণা
হাফেজ শহীদুল ইসলাম এবং জান্নাত আরা ঝর্ণার ঘরে আবদুর রহমান ও তামীম নামে দুই পুত্র সন্তান আছে। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট খুলনার মাদরাসা শিক্ষক শহীদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় জান্নাত আরা ঝর্ণার। পরবর্তীতে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। এবার তার লেখা ২০০ পৃষ্ঠার তিনটি ডায়েরি ডিবির হাতে এসেছে। এসব ডায়েরিতে রয়েছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
ওই ডায়েরিগুলোতে ঝর্ণা তার জীবনের অনেক ঘটনাই লিপিবদ্ধ করেছেন। একটি অংশে লিখেছেন, কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকার পর হেফাজত নেতা মামুনুল হকের জিম্মায় অবিবাহিতা উল্লেখ করে ঢাকার নর্থ সার্কুলার সড়কের একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় সাবলেট ভাড়া নেন। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত জান্নাতের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তিনি উল্লেখ করেন তিনটি ডায়রিতে।
প্রথম ডায়রিতে জান্নাত লিখেছেন, ‘আমাকে নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। শরীরের দাবিদার আছে। ’ এরপর লিখেছেন, ‘মামুন সাহেব আমার শরীরটা কিনেছে কেন আল্লাহ সব জেনে মামুন সাহেব যা করেছেন আমি শুধু তার টাকা ফেরত দিতে চাই,… আল্লাহ কবুল করো। ’
দ্বিতীয় ডায়েরিতে জান্নাত লিখেছেন, ‘আমার প্রতি কখনো কারও মায়া জন্মায়নি। শুধু প্রেমে পড়েছিল, কেউ কখনো সত্যিকারে ভালোবাসেনি। আমাদের সঙ্গে শুধু প্রেম হয়েছিল। কোনো ভালোবাসা ছিল না, ছিল শুধু ক্ষণিকের আবদার পূরণের আমেজ। ’
দ্বিতীয় ডায়েরির শেষ পাতায় লিখেছেন, এম, ২০/০২/১৯, এগ্রিম্যান্ট স্টার্ট। এই সংক্ষিপ্ত লেখার ব্যাখ্যা তৃতীয় ডায়েরিতে দেন জান্নাত। সেখানে লিখেন, স্বপ্নে দেখলাম হেল্প চাচ্ছি। বাট সে হাতটা বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবছিলাম ঘুমের মাঝে বিয়ে না করে জড়িয়ে কেন ধরেছে? ‘এবার বাস্তবতা শুরু ঠিক ফেব্রুয়ারির ১৯ বা ২০ হবে এখন চলছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তাকে খুব ঘৃণা করি। আবার কখনো মনে হয় ভালোবাসি, তবে হ্যাঁ আমার লাইফটা নরক বানিয়ে ফেলেছে। ’
এরপর জান্নাত লিখেছেন, সাদা সাদা জামা পরলে আর বড় মাওলানা হলেই মানুষ হয় না। মুখোশধারিও হয়। মামুন সাহেব আমার শরীরটা কিনেছে কেন আল্লাহ?
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জান্নাত লিখেছেন, ‘টাকা দিয়ে আমার দেহ কিনেছিলেন। আজ আপনার টাকা আমি ফেরত দিতে চাই। শুধু আমার সময় ফেরত চাই। কেন করেছিলেন এমন। আপনার অনেক টাকা ছিল, পাওয়ার ছিল তাই?’ বিবাহবহির্ভূত মেলামেশার অনুশোচনার কথাও উঠে এসেছে ঝর্ণার ডায়েরিতে। ডায়েরির পাতায় পাতায় রয়েছে মামুনুলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের আর্তনাদ। ডায়েরিতে ঝর্ণা লেখেন, আমি তাকে ভালোবাসি না ঘৃণা করি বুঝতে পারছি না। কিন্তু সে আমার জীবনকে নরক বানিয়ে ফেলছে।
কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চান মামুনুল হক। সেখানে তিনি স্বীকার করেন গত কয়েক দিনে ফাঁস হওয়া ফোনালাপ তারই ছিল। আত্মপক্ষ সমর্থন করে মামুনুল বলেন, ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করা যায়। ’