দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে আগামী বুধবার থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ যাচ্ছে সরকার।
‘লকডাউন’ সফল করতে কাজ শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে গতবারের মতোই ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজ নিজ জেলার রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করবেন।
আজ রবিবার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর ‘লকডাউনের’ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে সেটি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেটিও জানা যাবে আজ।
‘লকডাউনের’ সময় শুধু জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হাসপাতাল, গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস, মানুষ ও প্রাণীর খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী যানবাহনের মতো বিষয়গুলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকবে। ওষুধের দোকানও খোলা রাখা যাবে। ব্যাংকও নির্দিষ্ট সময় খোলা রাখার নির্দেশনা আসতে পারে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ৬৬ দিন করা হয়েছিল। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়, সেটি কার্যত কোনো ফল দেয়নি। এই কঠোর বিধি-নিষেধও নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যে কারণে দুই দফায় সেই বিধি-নিষেধ শিথিল করে সরকার।
এরপর আগামী বুধবার অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ কথা বলা হয়। গত শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। তবে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তাঁরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। বৈঠকে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ‘লকডাউনের’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেবেন। সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা বলছেন, বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসবে। তাই প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
তবে তাঁরা বলছেন, কঠোর বিধি-নিষেধ নিশ্চিত করতে গেলে সাধারণ ছুটির বিকল্প নেই। প্রথমবার সাধারণ ছুটি দেওয়ার কারণেই করোনা সংক্রমণ সহজে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। তবে কিছু যৌক্তিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির যানবাহন চলাচল নিশ্চিত থাকবে।
কী কী খোলা থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে একজন কর্মকর্তা জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই সময়ে অনেক এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে যান। এমন শ্রমিকদের জন্য দূরপাল্লার বিশেষ বাস নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এভাবে দেশের মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে।
দূরপাল্লার বাস বন্ধই থাকছে: ৪ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারির পর দুই দফায় সেটি শিথিল করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত অন্যতম। কিন্তু দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ হয়েছে। ১৪ এপ্রিল ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ কার্যকরের আগে আগামীকাল সোমবার ও পরশু মঙ্গলবার দূরপাল্লার বাস চলবে কি না, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক মন্ত্রণালয় থেকেও কিছু জানানো হয়নি। উত্তর মিলছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, সড়কমন্ত্রী তাঁর সর্বশেষ ঘোষণায় বলেছেন যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি দূরপাল্লার বাস চলার অনুমতি না আসে, তাহলে ভাবতে হবে বাস চলাচল বন্ধই থাকবে।
সূত্রটির ভাষ্য, সরকার চাইছে সংক্রমণ যাতে দেশব্যাপী না ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্যই লকডাউনের প্রস্তুতি চলছে। মাঝের এ দুই দিন যদি দূরপাল্লার বাস চলতে দেওয়া হয়, তাহলে তো ‘লকডাউনের’ সাফল্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।