বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, সাজিদুর, মোবারক ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে। তারা বলেছে, আমার নেতৃত্বে নাকি মাদ্রাসায় হামলা করা হয়েছে। আমার নেতৃত্বে যদি মাদ্রাসায় হামলা করা হয়ে থাকত তাহলে আমি ঐটা অস্বীকার করতাম না। আমার নেতৃত্বে যেদিন মাদ্রাসায় হামলা করা হবে সেদিন এখানে মাদ্রাসা থাকবে না। আমার নেতৃত্বে যেদিন মাদ্রাসায় হামলা হবে তারপর সাংবাদিক সম্মেলন করে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমি দুষ্কর্ম করি না।
সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে ৫ কৃষকের মাঝে ৫টি কম্বাইন হারভেষ্টার বিতরণ এবং প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় দুই হাজার কৃষককে বিনামূল্যে ধান বীজ ও সার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এরা হলো মিথ্যাবাদী। মিথ্যাবাদীর পিছনে নামাজ হয় না। ইসলামের পরিভাষায় মিথ্যাবাদীকে ফাসেক বলা হয়। আপনারা যারা মোবারক উল্লাহ ও সাজিদুর রহমানের মতো ফাসেকদের পিছনে জেনেশুনে নামাজ পড়বেন, তাদের নামাজ কবুল হবে না। আমি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকেই এই কথাটি বললাম। মামুনুল হকের মতো বদমাইশ লোকদের চরিত্রই হলো মিথ্যা বলা। কারণ ওরা তো বলেই মিথ্যা বলা জায়েজ। অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মিথ্যা বলা হারাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, মিথ্যা হলো সকল পাপের জননী।
তিনি বলেন, হেফাজতি মোল্লারা বলেছে- তারা নাকি আমার জানাজা পড়াবে না। আমি আমার আত্মীয়স্বজনদের কাছে ওছিয়ত করে যাবো, আমার মৃত্যুর পর কোনো হেফাজতি যেন আমার জানাজা পড়ানো তো দূরের কথা, তারা যেন আমার জানাজায় অংশগ্রহণই না করতে পারে। কারণ হেফাজতিরা হলো হযরত আলী (রাঃ) এর ভাষায় খারেজি (খারেজু মিনাল ইসলাম)
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, হেফাজত নেতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে তারা নাকি ভাঙচুর ও জ্বালাও পোড়াও করেনি। অথচ ২৬ মার্চ রেলস্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ার সময় এসব মোল্লারা ছাড়া আর কেউ ছিল না। হেফাজতিরা মিউনিসিপ্যালিটি পুড়িয়ে ছাই করে দিল। অথচ আপনারা কেউ এটির প্রতিবাদ করলেন না, কেন করলেন না? এখন যদি মিউনিসিপ্যালিটির রিকনস্ট্রাকশন না করা হয় কেমন লাগবে? আমি জানি, আপনারা আন্দোলন করবেন। সরকারকে গালি দিবেন। কিন্তু যে হারামজাদারা এসমস্ত দুষ্কর্ম করল তারা তো আপনাদের কাছ থেকে পার পেয়ে গেল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভূমি অফিস কোনো কাজে লাগে না আপনাদের? এটি তো সদর উপজেলা ভূমি অফিস। এখানে উপজেলার যে সাহেবরা আছেন, চেয়ারম্যান পদধারী, আপনাদের জনগণের দলিল দস্তখত কী নাই এখানে? আপনাদের জনগণ কী ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই? তাহলে আপনারা কেন এই তাণ্ডবের প্রতিবাদ করলেন না?
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ভূমি অফিস সরকারি প্রতিষ্ঠান এটি বড় কথা না। বড় কথা হলো এটির ওপর মানুষের জীবন ও জীবীকা নির্ভর করে। ভূমি অফিসে আগুন লাগানো মানে আমাদের ঘরে আগুন লাগানো, পৌরসভায় আগুন লাগানো মানে আমাদের ঘরে আগুন লাগানো। রেলস্টেশনে আগুন লাগানো মানে আমাদের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া। অথচ এসব ধ্বংসের পরও তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেন না। রেলস্টেশন কবে চালু হবে সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। কারণ এটার পুরো সিস্টেমটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের তাণ্ডবের সময় মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা কার্যালয়, ভূমি অফিসসহ সরকারি, বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। সেবাদানকারী সংস্থাগুলো ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয়ায় জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। হেফাজত যে কাজগুলো করেছে তা ইসলাম সম্মত নয়। এতে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।
মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, বর্তমানে কৃষি খাতকে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য যোগানের জন্য কৃষির আধুনিকায়ন খুবই জরুরি। কৃষক ও কৃষির উন্নয়নের জন্য সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন ও বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সার, বীজ ও কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ এইচ মাহবুব আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন।
একই অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার ১৬২ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯শ’ টাকার চেক এবং ১৭ জন শিল্পীর প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক তুলে দেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদর উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ও উপকারভোগী কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।