আর দেরি নয়, এখনই সময়

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

১০ ও ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি দিন। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার এবং জারি করা হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (The proclamation of Independence)। ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুজিবনগরের (স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষিত প্রথম রাজধানী) আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করছিল।

সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পূর্বে আমরা স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলাম। তবে ১০ ও ১৭ এপ্রিলের পূর্বে সারাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ অসংগঠিত ও অনেকটা বিশৃঙ্খভাবেই দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসরদের মোকাবেলা করে যাচ্ছিলো। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ নিজেদেরকে সংগঠিত করেন একক দায়িত্বে। সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একসংবদ্ধ ও সুগঠিত কাঠামোর রূপ লাভ করে। যা দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ জয়ে সহায়তা করেছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু সশস্ত্রতাই ছিলনা। নবগঠিত সরকারের অভ্যন্তরীণ বেসামরিক প্রশাসন, বৈদেশিক প্রচার-প্রচারণা, অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ, বিশ্ব রাষ্ট্রসমূহের সর্মথন আদায়, জাতিসংঘের অবিরাম প্রয়াস মুক্তিযুদ্ধকে ক্রমশঃ শক্তিশালী ও বিজয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত এবং সোভিয়েট ইউনিয়নের সক্রিয় ও ইতিবাচক সর্মথনে, মার্কিনী ও চৈনিক সক্রিয় বিরোধিতা সত্বেও আমরা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ঘটিয়ে বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করতে সক্ষম হই।

এই বিজয়ের পথ ধরেই জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা লাভ করে এবং পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হই। ১০ ও ১৭ এপ্রিলকে ঘিরে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের যে ঘনঘটা তা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জল অধ্যায়। এপ্রিলের এই সব ঘটনাবলীকে ইতিহাসের বাস্তবতার নিরিখে বিচার করতে হবে। মুজিবনগরের প্রথম বাংলাদেশ সরকার এবং তাজউদ্দিন-নজরুল-মনসুর আলী-কামরুজ্জামানের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি (খুনী) মোস্তাকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডকেও বিবেচনায় নিতে হবে। মোস্তাকের নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র অথচ কুটচালে তৎপর গোষ্ঠিটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বিপথগামী করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। ষড়যন্ত্রী মোস্তাকেরর ষড়যন্ত্রকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় শান্তিকামী ভাবাদর্শ আমাদের সমাজ কাঠামোয় বহাল তবিয়তে রয়ে যায়। এমনকি এদের একটি অংশ এখনও সর্বোতভাবে বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা প্রশ্নে তাদের অনীহা, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অবস্থানের বিপরীতে ওদের অবস্থানই মোস্তাকের ধারার ফল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও মুজিবাদর্শে দৃঢ় অবস্থানই স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্রটিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম। রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধীদের অবাধ তৎপরতার সুযোগ হাজার বছরের শৃঙ্খল ভাঙ্গা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য কখনও সুখকর হতে পারে না। এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে সুদৃঢ় ও মজবুত করতে পারবে না। রাষ্ট্র জন্মের পঞ্চাশ বছর অতিবাহনেও স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতাকে আদর্শিক ও রাষ্ট্রিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে আমাদের রাষ্ট্র দর্শনের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে।

তাই আমরা মনে করি বাংলাদেশের প্রথম সরকারের সুবর্ণজয়ন্তীতে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাববার সময় খুবই জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার বিষয়গুলো সিরিয়াসলি নিতে হবে।
আর দেরি নয়, এখনই সময়।

শেয়ার করুন