আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস। চলতি আসরের নিলামে তাকে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে কিনে নিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। আসরের প্রথম ম্যাচে নিজের নাম ও দামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এ ৩৩ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন, কেনো তাকে এত দাম দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে রাজস্থান। সোয়া ১৬ কোটির মরিসের ঝড়েই আসরের প্রথম জয় পেয়েছে আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নরা। চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বর্তমান রানার্সআপ দিল্লি ক্যাপিট্যালসকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রাজস্থান।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি দিল্লি। জবাবে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় পরাজয়ের শঙ্কা জাগে রাজস্থানের। তবে দুই দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভিড মিলার ও ক্রিস মরিসের ব্যাটে চড়ে আসরে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমানরা।
দিল্লির করা ১৪৭ রানের জবাবে শুরুটা মোটেও ভাল ছিল না রাজস্থানের। দলীয় ৪২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে একে একে সাজঘরে ফিরে যান মানান ভোহরা (৯), জস বাটলার (২), সানজু স্যামসন (৪), শিভাম দুবে (২) ও রিয়ান পরাগ (২)।
অন্য ব্যাটসম্যানদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের ভিড়ে শুরুতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন পাঁচ নম্বরে নামা মিলার। প্রথমে তিনি সঙ্গী হিসেবে পান রাহুল তেওয়াতিয়াকে। দুজন মিলে মাত্র ৩৩ বলে যোগ করেন ৪৮ রান। যেখানে তেওয়াতিয়ার অবদান ১৭ বলে ১৯ রান।
দলীয় ৯০ রানে তেওয়াতিয়া ফিরে গেলে আক্রমণের পথ বেছে নেন মিলার। ইনিংসের ১৬তম ওভারে আভেশ খানকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পূরণ করেন নিজের ব্যক্তিগত ফিফটি। কিন্তু একই ওভারে টানা তৃতীয় ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় আউট হয়ে যান ৭ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৩ বলে ৬২ রান করা মিলার।
তখনও জয়ের জন্য ২৫ বলে ৪৪ রান করতে হতো রাজস্থানকে, হাতে উইকেট ছিল মাত্র ৩টি। দলের একমাত্র আশা হিসেবে ছিলেন মরিস, সঙ্গী হিসেবে পান জয়দেব উনাদকাতকে। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে মরিসকে সাহস জোগান উনাদকাত। তবে ১৮তম ওভারে দারুণ বল করেন টম কারান।
যার ফলে শেষ দুই ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ২৭ রান। তখনই নিজের বিধ্বংসী রুপ দেখান মরিস। কাগিসো রাবাদার করা ১৯তম ওভারে দুই ছক্কার মারে তুলে নেন ১৫ রান। শেষ ওভারে বাকি থাকা ১২ রান করতে মাত্র চার বল নেন তিনি। টম কারানের করা সেই ওভারের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মরিস।
শেষপর্যন্ত চারটি বিশাল ছয়ের মারে ১৮ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন সোয়া ১৬ কোটি রুপি মূল্যের মরিস। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা উনাদকাত খেলেন ৭ বলে ১১ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। বল হাতে ৩ উইকেটের পর এই ১১ রানের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন উনাদকাত।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। জয়দেব উনাদকাতের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে তারা ৩ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ৩৬ রান।
তিনটি উইকেটই নেন উনাদকাত। বাঁহাতি এই পেসার দশের ঘর ছুঁতে দেননি পৃথ্বি শ (২), শিখর ধাওয়ান (৯) আর আজিঙ্কা রাহানেকে (৮)। প্রতিপক্ষকে এমন চেপে ধরা সময়ে ইনিংসের সপ্তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানকে আক্রমণে আনেন রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। প্রথম ওভারেই অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান টাইগার পেসারও।
ওই ওভারের প্রথম বলে এক রান দেন মোস্তাফিজ। পঞ্চম ডেলিভারিতে মার্কাস স্টয়নিসকে (০) বোকা বানান দুর্দান্ত এক কাটারে। বলের গতি বুঝতে না পেরে ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন দিল্লির অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান, আকাশে ভেসে থাকা বল দৌড়ে গিয়ে দারুণভাবে তালুবন্দী করেন জস বাটলার। ওই ওভারে মাত্র এক রানই দেন ফিজ।
৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে এরপর টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন অধিনায়ক রিশাভ পান্ত। এরই মধ্যে ১২তম ওভারে মোস্তাফিজকে আবারও আক্রমণে আনেন স্যামসন। এই ওভারের শেষ বলে পান্ত বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তার ফিফটি পূরণ করেন। মোস্তাফিজ খরচ করেন ৮ রান।
পরের ওভারেই ভাঙে পান্ত-ললিতের পঞ্চম উইকেটে গড়া ৫১ রানের জুটিটি। ৩২ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫১ রানে রানআউটের কবলে পড়েন পান্ত।ধীরগতির ললিতও এরপর ২৪ বলে ২০ করে ক্রিস মরিসের শিকার হন।
১০০ রানে ৬ উইকেট হারানো দিল্লি সেই ধাক্কা সামলে খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। ১৭তম ওভারে আবারও বল হাতে পেয়ে ৮ রান খরচ করেন মোস্তাফিজ। ১৯তম ওভারে এসে পেয়ে যান নিজের দ্বিতীয় উইকেটের দেখা।
এবার প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করেছিলেন। পরের বলে দারুণভাবে ফেরেন। টম কুরানকে (১২ বলে ২১) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতেই বোল্ড করেন বাংলাদেশি কাটার মাস্টার।
মোস্তাফিজের ওই ওভারের শেষ বলে আরও একটি উইকেট হারায় দিল্লি ক্যাপিটালস। এবার দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ফলে ধুঁকতে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালস শেষ পর্যন্ত থেমেছে ৮ উইকেটে ১৪৭ রানে।
প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৭ রান দেয়া মোস্তাফিজ নিজের শেষ ওভারে একটুু খরুচে ছিলেন। তবে ডেথের বোলিংয়ে এটাকে খুব খারাপ বলার উপায় নেই। ১২ রান খরচ করে একটি উইকেট তো নিয়েছেন, হয়েছে একটি রানআউটও।
সবমিলিয়ে ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে আজ মোস্তাফিজ শিকার করেছেন ২ উইকেট। এছাড়া শুরুতেই বল হাতে আগুন ঝরানো উনাদকাত ৪ ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিতে খরচ করেন ১৫ রান।