হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ধরপাকড়ের ধারাবাহিকতায় এবার গ্রেফতার করা হয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে। তিনি ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও সহসভাপতি।
আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর বারিধারা জামিয়া মাদানিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জুনায়েদ আল হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় মামলা ছাড়াও বর্তমানে একাধিক মামলা রয়েছে।
এর আগে দুপুরে হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এছাড়া সম্প্রতি হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হেফাজত নেতাদের ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে ডাকা আন্দোলন ঘিরে নাশকতার মামলায়ও কাউকে কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর অনেকটা চুপসে যায়। পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে তাদের অনেকটা সুসম্পর্কও গড়ে উঠে। তবে হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী গত সেপ্টেম্বরে ইন্তেকালের পর নতুন কমিটির অনেক নেতা সরকারের বিরাগভাজন হন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় মাঠে নামে হেফাজত। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার দিনে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মারা যান। ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে হেফাজত ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দুইটি মন্দিরসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়ি ও অফিসে হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। রেলস্টেশন থেকে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, হিন্দুদের উপাসনালয়, ভূমি অফিস- বাদ যায়নি কিছুই। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনও। হামলার টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি ছিল তীব্র ক্ষোভ। প্রতিটি প্রতিকৃতিই খুঁচিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বলতে গেলে ওই তিন দিন যেন একাত্তরেরই খণ্ডচিত্র প্রত্যক্ষ করেছে জেলাবাসী। কয়েক দিনের আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে প্রায় ১৫ জন মারা যান। এসব ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হয়, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে সারাদেশে চলছে হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়।