গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে হেফাজত ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দুইটি মন্দিরসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়ি ও অফিসে হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। রেলস্টেশন থেকে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, হিন্দুদের উপাসনালয়, ভূমি অফিস- বাদ যায়নি কিছুই। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনও। হামলার টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি ছিল তীব্র ক্ষোভ। প্রতিটি প্রতিকৃতিই খুঁচিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বলতে গেলে ওই তিন দিন যেন একাত্তরেরই খণ্ডচিত্র প্রত্যক্ষ করেছে জেলাবাসী। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা আসামি। পুলিশের বিশেষ শাখার অভিযানে প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছেন তাণ্ডবের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে।
তবে স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মত ও পথকে জানিয়েছে, এই তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হেফাজতের যেসব কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে সেখান থেকে মূল অপরাধীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আমির সাজিদুর রহমান, জেলার সেক্রেটারি মোবারক উল্লাহ প্রমুখরা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোনে তদবির করছেন এবং তাদেরকে তদবিরের মাধ্যমে ছাড়িয়েও নিচ্ছেন! যদিও ঐসময়ের তাণ্ডবের ঘটনায় ধারণকৃত ছবি, ভিডিও ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের শীর্ষ নেতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহর সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট।
এসব বিষয়ে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিমের নম্বরে কল করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘অভিযোগটি আমাদের কাছেও এসেছে, যেটা অত্যন্ত দুঃজনক, এরকমটা হলে আমরা মনে করি- সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহকে ২৬ তারিখে যে তাণ্ডব হয়েছে সেটার নির্দেশদাতা হিসেবে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করা হোক। পাশাপাশি এসব অপতৎপরতা বন্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি-ঘটনার মূল রহস্য বের করার জন্য একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। কেননা সর্ষের ভেতরে কোনো ভূত আছে কিনা সেটি দেখা উচিত এবং সেই ভূত কী পরিমাণ আছে, অর্থাৎ সর্ষের পরিমাণ বেশি নাকি ভূতের সংখ্যা বেশি সেটাও একটু খুঁজে দেখা উচিত। কিন্তু বিচারবিভাগীয় তদন্তের কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত আমি পায়নি। কিন্তু বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়ে সমস্ত ঘটনাকে যদি উদঘাটন করা না হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে এবং এটাকে কেউই বাঁধা দিতে পারবে না।’
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। জেলাজুড়ে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকেরা ওই হামলা চালান। এ সময় জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা আসামি। ৫৫টি মামলার মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা হয়। হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনায় স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত মোট ২৬১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।