আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেটে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আরও দুই ডজন শীর্ষ নেতা। তাদের সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা হেফাজতের সক্রিয় এই নেতাদের তালিকা তৈরি করেছে। তালিকাভুক্ত এসব নেতা সবাই বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিরোধিতা থেকে শুরু করে সম্প্রতি মোদিবিরোধী আন্দোলনে যেসব নেতা সক্রিয় রয়েছেন, তারাই এই তালিকায় আছেন। ৩০ জনের ওই তালিকা থেকে এ পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তালিকার বাইরেও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া তালিকায় থাকা একজন এরইমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হেফজাতের তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্যা ইউনিটগুলোও কাজ করছে। হেফাজতে ইসলামকে আর কোনও সহিংসতা করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত নেতাদের সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা কোথায় কোথায় যাচ্ছেন এবং কার সঙ্গে বৈঠক করছেন, সেসবের খবর নেওয়া হচ্ছে। তালিকাভুক্ত হেফাজতের নেতারা যাতে কওমি মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তালিকায় যারা আছেন
গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা এই তালিকার একটি কপি গণমাধ্যমকর্মীর হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, তালিকার এক নম্বরে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবু নগরীর নাম। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ছিলেন দুই নম্বরে। রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া তালিকায় থাকা অন্যরা হলেন— হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি, হাবিবুর রহমান কাশেমী, নুরুল ইসলাম অলিপুরী, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা মাসউদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসেন কাশেমী, আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, উপদেষ্টা মুফতি মাহফুজুল হক, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাওলনা আব্দুর রহমান খান, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, নায়েবে আমির জাফরুল্লাহ খান, যুগ্ম সচিব মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ আনাস, ঢাকা মহানগরীর উপদেষ্টা মুফতি আবুল কালাম কাশেমী, ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহার, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন একরাম, ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি মনির হোসেন মুন্সী, ঢাকা মহানগরীর উপদেষ্টা হাপেজ আব্দুল মো. হাসান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি ও আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী এবং কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া তালিকায় থাকা মুফতি ওয়াক্কাস সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় প্রচারণার আড়ালে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলেন। এছাড়া কারণে-অকারণে তারা রাস্তায় নেমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে আসছেন। এবার আর হেফাজতের কোনও নেতাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন